আমরা প্রতিনিয়ত সমাজ এ রাস্ট্র পরিবর্তন নিয়ে কত কথা বলছি, দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, উঁচু, নিচু, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের কথা বলছি। আমরা অনাচার, বৈষম্য ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজের কথা বলছি। সুশাসন ও আইনের শাসন নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু কিভাবে করবো তাও বলছি? উওরে বলছি; উন্নত সিস্টেম করতে হবে। আসলেই কি শুধু উন্নত সিস্টেম করলেই সমাধান হবে? যে সমাজে দরবেশ, এস আলম, বেনজিরের, হারুন ও বিপ্লবের মত মানুষ অভাব নেই। আর আরো জন্ম হবে না যে তা কে জানে? তাদেঁরকে কি শুধু সিস্টেম দিয়ে ট্যাকল দিতে পারবেন?
তারা কি সিস্টেমের উপরে নয় ? যে সমাজে কর্ণেল জিয়ার মত মানুষ ‘আয়না ঘর’ তৈরি করে । তারাই তো সিস্টেমের মূল ড্রাইভার নয় কি ? অথবা এদের মত মানুষরাই তো আবার এই সিস্টেমের মূল ড্রাইভার হবে তাই নয় কি ? এ প্রসঙ্গে বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেইভিড ক্যামরুনের একটি কথা মনেপড়ছে; বৃটেনে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় একবার সারা দেশে দুই মিনিটের জন্য ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়াতে দেশের বড় বড় শপিং মল গুলো লুঠ হয়ে গিয়েছিল।
তখন মি. ডেইভিড ক্যামরুন দুঃখ করে বলেছিলেন: “আমরা ঠিকে আছি একমাত্র আমাদের সিস্টেমের কারণে;এই জন্য যে চুরিতে ধরা পড়লে শাস্তি হবে, জেল হবে । এই জন্য নয় যে চুরি করা ঠিক না। চুরি করা নৈতিকতা বিরুধী বা চুরি করা পাপ ”।চিন্তা করে দেখেন, আসলেই কি শুধু সিস্টেম ডেভেলাপ করলে সমাজ, রাস্ট্র, সমস্যার পরিবর্তন করা আদৌ সম্ভব ? । আমি নিজেও সিস্টেমের একজন গুনো-গ্রাহি, সিস্টেম ডেভেলাপ করা আপাত কিছুটা সমাধান হতে পারে, সমস্যা একটু লাঘব হতে পারে ।কিন্তু শুধুই সিস্টেমের পরিবর্তন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে কি? তবে সাস্টেইনবল সমাধানের জন্য হিউম্যান ডেভেলাপমেনট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় কি ? । দেখেন গত দশক ধরে বাংলাদেশেও সিস্টেম অনেক ডেভেলাপ হয়েছে। কিন্তু কি দুর্নিতি কমেছে ? কিন্তু অপরাধ কি কমেছে? টাকা দিলে একদিনে পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হচ্ছে। নতুন করে পরিবর্তন, সংশোধন, পরিমার্জন এমনকি ব্যাক ডেইটে দেখানো হচ্ছে।
আরো অবাক করা কান্ড ঘটছে, আগের ফিংগার প্রিন্ট, আই-প্রিন্ট সব ডিলিট করে নতুন করে নতুন জন্ম তারিখ দিয়ে পাসপোর্ট হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দেদারছে সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। একবিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রযুক্তির চরম উন্নত ও সবচেয়ে গ্লোবালইড এই সময়ে যেখানে আকাশে কি আছে ? সাগরের নিচে কি আছে ? পৃথিবী মাটির নিচে কি আছে ? সব আমরা মূহুর্তের মধ্যে নির্নয় করতে পারি ঠিক তখনও মানুষের উপর বর্বর নির্যাতনের জন্য রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে “ আয়না ঘর” পরিচালিত করেছে।
মাত্র কয়দিনে দিনে দুপুরে গুলি করে প্রায় হাজারও মানুষ মেরে ফেলেছে তাদেঁর বুক একবারও কাঁপে নি। মোদ্দা কথা ভাই, এই সিস্টেম ডেভেলাপ করে লাভটা কি ? আমরা যতই সিস্টেম, সিস্টেম করে চিল্লাই না কেন, যত দিন না পর্যন্ত মানুষের মধ্যে নীতি, নৈতিকতার উৎকর্ষতা সাধান না হবে, উন্নত চরিত্রের মানুষ তৈরি না হবে, মানুষের মনে সৃষ্টিকরর্তা ভয় না থাকবে। সমাজ, রাস্ট্র যতই উন্নত সিস্টেম করুক না কেন, ততো দিন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হবে না।
লেখক: কাওসার আহমেদ, প্রবাসী সাংবাদিক