‘হাডুডু’ জাতীয় খেলা হলেও নিয়মিত আয়োজন না হওয়ায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে খেলাটি। গ্রাম-গঞ্জে অতি জনপ্রিয় খেলাটির আসর এখন আরও নিয়মিত হয়না। দু-এক জায়গায় আয়োজন হলে খেলা দেখতে ঢল নামে হাজারো মানুষের।

গ্রামবাংলার হাজার বছরের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার বুড়িস্থল গ্রামে আয়োজন করা হয় এক বিশাল হাডুডু খেলার প্রতিযোগিতা।


সপ্তাহ ব্যাপী এই আয়োজনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ২০০টি দল অংশগ্রহণ করে। হাজারো মানুষের সমাগমে মুখরিত হয় খেলাপ্রাঙ্গন। জাতীয় এই খেলাটি ধরে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন খেলোয়ারসহ সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলার বুড়িস্থল, বাদেসাদকপুর যোগীরগাঁওসহ তিন গ্রামের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই হাডুডু প্রতিযোগিতা। ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতকসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ২০০টি দল অংশগ্রহণ করে।

বৃহস্প্রতিবার দিনব্যাপী সেনিফাইনেল খেলায় অংশগ্রহণ করে ২০টির বেশি দল। সেনিফাইনেল খেলা দেখতে চারদিকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় বুড়িস্থল যোগীরগাঁও পয়েন্ট মাঠে। চল দিক--দিক--দিক, কাবাডি, কাবাডি, হাডু ডু ডু ডাকে নিজেদের শারীরিক করসত দেখিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে হানা দিচ্ছেন খেলোয়াররা। মুহুমুহু তালিতে দর্শকরা উৎসাহ দিচ্ছেন খেলোয়ারদের। গ্রাম বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় জাতীয় খেলা হা ডুডুর যে কদর কমে যাননি তা দর্শকের উৎসাহ আর প্রফুল্লতা দেখলেই সহজেই অনুমেয় হয়।

খেলা দেখতে আসা দর্শকরা জানান, একসময়ে গ্রামেগঞ্জের নিয়মিতই টফকি খেলা বা হাডুডু খেলার আয়োজন হতো। আসেপাশের গ্রামের খেলোয়াড়দের দাওয়াত করে এনে গরু জবাই করে উৎসবমূখর পরিবেশে খেলায় অংশগ্রহণ করতেন গ্রামের কিশোর, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের খেলুয়াড়রা। সময়ের পরিক্রমায় আকাশ সংস্কৃতির কবলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ বিনোদনের অন্যতম এই খেলা। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে গ্রাবাসীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমি লোকজন।

আগামীতেও এই আয়োজন অব্যাহত রাখতে আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।

খেলা দেখতে আসা আব্দুল কাদির নামে ৭০ এক বৃদ্ধ বলেন, সংগ্রামের আগে আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন হাডুডু খেলা গ্রামে-গঞ্জে জনপ্রিয় ছিল। আশপাশের গ্রাম থেকে বাইয়াফ(খেলোয়াড়) দের দাওয়াত করে গ্রামে নিয়ে আসা হতো। গরু জবাই করে আনন্দ উল্লাসে এই খেলা খেলতাম আমরা। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলার আয়োজন হয় না। গ্রামের যুবক ছেলেদের এমন আয়োজন সত্যিই প্রসংশার দাবি রাখে।

আল আমীন নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজারো মানুষ ছোটে আসছেন খেলা দেখতে। দর্শকের উপস্থিতিতে মূখরিত খেলা প্রাঙ্গন। গ্রামীণ এই সংস্কৃতি রক্ষায় এলাবাসীর মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আশা করছি আগামীতে তারা এই আয়োজন অব্যাহত রাখবে।

এদিকে গ্রামীণ এই খেলা চর্চা ও আয়োজনে সরকারের পৃষ্টপোষকতার কথা জানিয়েছেন হাডুডু খেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাস্টার শহিদুর রহমান।

তিনি বলেন, তিন গ্রামের উদ্যোগে এই হাডুডু খেলার প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২০০টি দল অংশগ্রহণ করেছেন। শনিবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা হবে। যেই দল প্রথম হবে তাদের একটি ঘোড়া পুরস্কার দেয়া হবে। এছাড়াও বিভিন্ন পুরুষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সরকারের সহযোগিতা পেলে আগামীতে এই আয়োজন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/এসএনএ/এসডি-২৯