নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৭ জন, খুলনায় ৬৪ জন, সিলেটে ৪৫ জন, বরিশালে ২৮ জন, রাজশাহীতে ২৭ জন এবং ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫ জন করে শনাক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 


নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এইডস রোগীদের ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে, ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং ২ দশমিক ০৭ শতাংশ ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

 

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতিবছর শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে।

 

২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত ১ বছরে মোট এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ জনের। এছাড়া, ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনের। ২০২১ সালে বাংলাদেশে আরও ৭২৯ জনের দেহে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন ১৮৮ জন। তাদের নিয়ে দেশে এইচআইভি আক্রান্ত সম্ভাব্য রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার।

 

আলোচ্য সময়ে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী ১৮৬ জন, রোহিঙ্গা ১৮৮ জন, বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ১৪৪ জন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন, নারী যৌনকর্মী ১৭ জন, সমকামী ৬৭ জন, পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ১৩ জন।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এবং টিবি-লেপ্রোসী ও এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. খুরশীদ আলম বলেন, দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম, মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সংক্রমণের হার কম হলেও ঘনবসতি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং অসচেতনতার কারণে এইচআইভির ঝুঁকি আছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশেও ঝুঁকি বাড়ছে।

 

এদিকে, এইডস বিষয়ে এখনো সচেতনতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ছে। সচেতনতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সূত্র মতে, সাধারণ জনগণের মধ্যে এইচআইভি এইডস সংক্রমণের হার ০ দশমিক ০১ শতাংশের নিচে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল কবির বলেন, আশপাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এইডস রোগী কম। তবু, আমাদের সতর্ক থাকা খুব জরুরি। তা না হলে আমাদের দেশেও এইডসের ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা আছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশকে এখন বলা চলে—লো প্রিভিলেন্স। মূলত, এইচআইভির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাই রিস্ক কান্ট্রি। এখন আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও যেকোনো সময়ে এটি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

 

ইউএনএইডসের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার ড. সায়মা খান বলেন, এইডস প্রতিরোধের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ইউএনএইডস। আমাদের আগামী পাঁচ বছরের কৌশল হচ্ছে—ইউ ইজ ইকুয়্যাল টু ইউ। আনডিটেক্টেবল ইজ ইকুয়্যাল টু আনট্রান্সমিসেবল। অর্থাৎ আমি যদি ওষুধ খেয়ে দেহের ভাইরাসকে এমন একটা পর্যায়ে কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি যে, সেটা আর ছড়াতে পারবে না। তাহলে আমার এইচআইভিও ছড়াচ্ছে না, আমিও বেশি দিন বাঁচতে পারব।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম /কেআর/জিএসি-০২