ভোজ্য তেলের বাজারে স্বস্তির খবর দিচ্ছে পাম তেল (পাম অয়েল)। দেশে ভোগ্য পণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে এই তেল। অন্তত চার দিন ধরেই সরকারি দামের চেয়ে মণপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কমে এই তেল বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন কারণে খোলা পাম তেলের দাম কমেছে।


এর একটি হচ্ছে, সরকার ভোজ্য তেলের বাড়তি দাম নির্ধারণের পর থেকে পাইকারি বাজারে ক্রেতার দেখা মিলছে না। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের বুকিং দর কমে যাওয়ায় বেশি দামে তেল কিনে মজুদে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমেছে। তৃতীয়ত, রপ্তানির বাজার দখল করতে মালয়েশিয়ার রপ্তানি শুল্কহার কমানোর খবর।

দাম কমার বিষয়টি নিশ্চিত করে আরএম এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সাহেদ উল আলম বলেছেন, ‘পাম তেলের সরকার নির্ধারিত দর হচ্ছে মণপ্রতি ছয় হাজার ৯৫০ টাকা। কিন্তু অন্তত চার দিন ধরেই আমরা বিক্রি করছি ছয় হাজার ২০০ থেকে ছয় হাজার ৪০০ টাকায়। ’ তিনি বলেন, কম দামে বিক্রির কারণ বাজারে যে পরিমাণ তেল আছে, সে অনুযায়ী চাহিদা কম বা বিক্রি কম। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার প্রভাব তো আছেই।

খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার দর বেঁধে দিলেও খাতুনগঞ্জে সেটি খুব একটা কার্যকর হয় না। প্রতিদিনের চাহিদা-সরবরাহের ওপর নির্ভর করেই এখানে বাজারে দর নির্ধারিত হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বে পাম তেলের বড় রপ্তানিকারক ইন্দোনেশিয়া গত ২৮ এপ্রিল থেকে রপ্তানি বন্ধ করার পর এই তেলের মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড হয়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের আমদানিকারকরা ইন্দোনেশিয়ার বদলে মালয়েশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তখন মালয়েশিয়ায়ও এই তেলের দাম বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, মালয়েশিয়া এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান সংহত করতে পাম তেল রপ্তানিতে শুল্কহার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। জুন নাগাদ সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। শুধু তাই নয়, আগের চেয়ে বেশি পাম তেল রপ্তানির জন্য আইন সংশোধনও করছে মালয়েশিয়া সরকার।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ায়ও পাম তেল রপ্তানির জন্য বিশ্বের চাপ বাড়ছে। রপ্তানি খুলে দেওয়ার জন্য তাদের অভ্যন্তরীণ চাপ দিন দিন জোরদার হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার গত সোমবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় এরই মধ্যে পাম অয়েলের মজুদ সক্ষমতা প্রায় পূর্ণ হওয়ার পথে। ফলে রপ্তানি শুরু না করলে উদ্বৃত্ত পাম তেল নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে দেশটিকে।

চট্টগ্রামের একজন ভোজ্য তেল আমদানিকারক বলেছেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার বদলে আমরা মালয়েশিয়ার দিকে যাচ্ছি না। কারণ ইন্দোনেশিয়ায় আমাদের সরবরাহকারী আশ্বস্ত করেছেন, জুন থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে। তবে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হতে পারে। যেমন—পাম তেলের বদলে অন্য ভোগ্য পণ্য বিনিময় করা। ’

মালয়েশিয়া পাম অয়েল প্রমোশন কাউন্সিলের হিসাবে, ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের আগের দিন ২৭ এপ্রিল পাম তেলের বুকিং দর ছিল টনপ্রতি ছয় হাজার ৯৮৭ মালশেয়ািন রিংগিত। ২৯ এপ্রিল দাম বেড়ে সাত হাজার ১০৪ রিংগিতে পৌঁছে। পরে সেই দাম কমে যায়। গত মঙ্গলবার তা ছয় হাজার ৩১৩ রিংগিতে নেমে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাতুনগঞ্জের বাজারে গতকাল বুধবার এস আলম কম্পানির পাম তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ছয় হাজার ২১০ টাকা। ঈদুল ফিতরের আগে এই পাম তেল বিক্রি হয়েছিল মণপ্রতি সাড়ে ছয় হাজার টাকা। আর গতকাল সিটি গ্রুপের পাম তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ছয় হাজার ৪৬০ টাকায়। ঈদুল ফিতরের আগে এই পাম তেল বিক্রি হয়েছিল ছয় হাজার ৭০০ টাকায়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-০৯


সূত্র : কালের কণ্ঠ