গরু চুরির মামলায় এফআইআরভুক্ত আসামি ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় স্ত্রী স্বামীর গ্রেপ্তার এড়াতে পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেও শেষ রক্ষা হয়নি। উপরন্তু পুলিশের ধাক্কা, লাথি ও লাঠির আঘাতে লুটিয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে।

সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের শিবপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আলট্রাসনোগ্রাম সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় রক্ত দেওয়া হচ্ছে রোগীকে। আহত নারী ওই গ্রামের আবুল হাসেম রাজিবের (২২) স্ত্রী। প্রায় চার বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা।


স্থানীয় ইউপি সদস্য নবী হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে এলাকা থেকে ছয়টি গরু চুরি হয়। এর মধ্যে গরু উদ্ধারে এলাকায় বেশ কয়েকটি সালিসও হয়েছে। কোনো ফলাফল না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়। গরু চুরির মামলায় আবুল হাসেম রাজিবকে চার নম্বর সন্দেহভাজন আসামি করা হয়। এ অবস্থায় বেশ কয়েক দিন ধরে অভিযুক্ত রাজিব শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এটা জানতে পেরে মামলার বাদী পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে রাজিবকে ধরতে ঘরে প্রবেশ করে।

রাজিবের শাশুড়ি জাহানারা বেগম জানান, ওই সময় তিনি নিজের ঘরে ছিলেন। পরে এগিয়ে গিয়ে দেখেন পুলিশ তাঁর মেয়ের স্বামী রাজিবকে ব্যাপক মারধর করতে থাকলে অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে এগিয়ে গিয়ে তাদের পায়ে ধরে স্বামীকে না মারতে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে মেয়ে রিপা আক্তারকে (২০) ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং পরে তলপেটে লাথি মারে। এ সময় জোরে চিৎকার দিয়ে মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত আহত রিপা আক্তার আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জানান, পুলিশ যখন তাঁর স্বামীকে ধরতে ঘরে প্রবেশ করে তখন তিনি ভাত খাচ্ছিলেন। এ অবস্থাতেই স্বামীকে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করার চেষ্টা করে। তখন তিনি অনুরোধ করে বলেন খাওয়াটা শেষ করে নিতে। কিন্তু এমদাদ নামে এসআই তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পরপর দুটি লাথি মারেন। এতেই ক্ষান্ত হননি। হাতে থাকা লাঠি দিয়েও তাঁর মাথা ও শরীরে তিন-চারটি আঘাত করেন। এ সময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে শ্বশুর তাঁকে গৌরীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আহত রিপার শ্বশুর আবুল বাসার লিটন জানান, স্থানীয় হাসপাতাল থেকে বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করা ছাড়াও রক্ত দেওয়া হয়েছে।

গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক মো. এমদাদুল হক আসামি ধরার কথা স্বীকার করে জানান, গরু চুরির মামলায় রাজিবকে ধরার সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন পরিবারের লোকজন। এ সময় দা নিয়ে তেড়ে আসেন আসামি রাজিবের শাশুড়ি। অন্যদিকে স্বামীকে রক্ষা করতে স্ত্রী রিপা এগিয়ে এলে পা পিছলে পড়ে যান। তাঁকে কোনো মারধর করা হয়নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-১৩


সূত্র : কালের কণ্ঠ