আমাদের আশপাশে অনেক লোক আছে, যারা মুখে মুসলিম পরিচয় দিলেও মনে মনে তারা চরম ইসলামবিদ্বেষী। যারা মুসলিম সমাজে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালিয়ে ইসলাম ও মুসলমানকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। তাদের এই ধারা নবীজি (সা.)-এর যুগ থেকেই চলে আসছে। নবীজির যুগেও বহু মুনাফিক মুসলিম পরিচয়ে ইসলামের ক্ষতি করেছে, মহান আল্লাহ পরীক্ষাস্বরূপ তাদের সরাসরি চিহ্নিত না করলেও নবীজিকে তাদের সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

এবং তাদের কথাবার্তা ও কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে চেনার উপায় বাতলে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইচ্ছা করলে তোমাকে তাদের দেখিয়ে দিতাম, ফলে তুমি তাদের লক্ষণ দেখে তাদের চিনতে পারতে, তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদের চিনতে পারবে। আর আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত। ’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ৩০)


মুনাফিকরা মুসলিম সমাজের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই নবীজি (সা.) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মুনাফিক চেনার বিভিন্ন উপায় সাহাবায়ে কিরামকে বাতলে দিয়েছেন। নিম্নে সেগুলোর কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

দ্বিমুখী আচরণ করা : এটি মুনাফিকদের অন্যতম চিহ্ন। নবীজির যুগেও মুনাফিকরা নিজেদের ঈমানদার বলে দাবি করত, কিন্তু বাস্তবে তারা সর্বদা নবীজি (সা.) ও ইসলামকে দমিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তারা তোমাদের কাছে আসে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। অথচ অবশ্যই তারা কুফরি নিয়ে প্রবেশ করেছে এবং তারা তা নিয়েই বেরিয়ে গেছে। আর আল্লাহ সে সম্পর্কে জ্ঞাত, যা তারা গোপন করত। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬১)

অশ্লীলতা পছন্দ করা : অশ্লীলতা পছন্দ করা এবং তা জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা মুনাফিকদের কাজ। মুমিন শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কখনো অশ্লীলতায় লিপ্ত হলেও সে তা পছন্দ করতে পারে না, বরং তাকে গুনাহ মনে করে আল্লাহর কাছে তাওবা করে, অনুতপ্ত থাকে। কিন্তু মুনাফিক অশ্লীলতা পছন্দ করে এবং দাম্ভিকতার সহিত অশ্লীলতা প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের অংশ, তারা মন্দ কাজের আদেশ দেয় আর ভালো কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা নিজেদের হাতগুলোকে সংকুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে; ফলে তিনিও তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৭)

সাবলীল মিথ্যা বলা : মুনাফিকরা খুব গুছিয়ে মিথ্যা বলায় পারদর্শী হয়, সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা এদের অন্যতম মিশন। তাই তাদের মিষ্টি কথার ফাঁদে পা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসুল এবং আল্লাহ জানেন যে অবশ্যই তুমি তাঁর রাসুল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : মুনাফিকুন , আয়াত : ১)

বাচাল হওয়া : মুনাফিকরা অসম্ভব বাচাল ও বাকপটু হয়, তাদের কথার মারপ্যাঁচে ফেলে তারা মানুষের মস্তিষ্কে সন্দেহের বীজ বপন করে দেয়। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, লজ্জা, সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকির) দুটি শাখা। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)

ধোঁকা দেওয়া : মুনাফিকরা সরলমনা মুমিন বান্দাদের ধোঁকা দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘...তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেদেরই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না...। ’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ৮-১০)

ওয়াদা ভঙ্গ করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি : যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন সে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তা খিয়ানত করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০৯৫)

আমানতের খিয়ানত করা : মুনাফিক লোকদের কাছে আমানত রাখা হলে তারা তা রক্ষা করে না। রাসুল (সা.) এই অভ্যাসকে মুনাফিকের চিহ্ন বলেছেন। (বুখারি,  হাদিস : ৬০৯৫)

নামাজে অলসতা করা : নামাজে অলসতা ও লোক-দেখানো নামাজ—এ দুটিকেই কোরআনের ভাষায় মুনাফিকের অভ্যাস বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর (আল্লাহ) তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদের দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে। ’ (সুরা : নিসা,    আয়াত : ১৪২)

মহান আল্লাহ সবাইকে মুনাফিকের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-১২


সূত্র : কালের কণ্ঠ