২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্যে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর কার্যকারিতা নিরীক্ষা করবার জন্যে নির্বাচন কমিশন প্রযুক্তিবিদদের আহ্বান জানিয়েছিলো। ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন কমিশনে এসেছিলেন প্রযুক্তিবিদেরা।

সকাল সোয়া ১০ থেকে অনুষ্ঠিত প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, চার নির্বাচন কমিশনার এবং শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভার্চুয়ালি ম্যানুপুলেট করা অসম্ভব। বুধবার (২৫ মে) দুপুরে নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ড. জাফর ইকবাল বলেন, ইভিএম অপারেট শুরুর আগে দেখে নেওয়া সম্ভব ভেতরে কী আছে। কেউ বিশ্বাস করবে কি না সেটা তার ওপর। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, আপনারা যদি আপনাদের মতো করে নির্বাচন করতে পারেন, নতুন নির্বাচন কমিশন তৈরি করে তাহলেও আপনারা এই মেশিনটা ব্যবহার করেন। তাতে আপনাদেরই লাভ হবে।

তিনি বলেন, কেউ বিশ্বাস করবে কি না সেটা তার ব্যাপার, সেটা রাজনৈতিক ব্যাপার। আমি টেকনিক্যাল জিনিসটা বলছি। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে এর ভেতরে ম্যানুপুলেট করার সম্ভাবনা নেই। যারা ইভিএমের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের অনুরোধ করবো যেন সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লিখে আমাদের জানায়। আমরা তাদের ইভিএম সম্পর্কে ডিটেইলস জানাতে বা দেখাতে রাজি আছি। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের আন্ডার গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ইভিএম তৈরি করে। ইভিএম তৈরি করে তারা বিদেশ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার নিয়ে এসেছে। ইভিএম মেশিন নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হয়েছি। অত্যান্ত চমৎকার একটি মেশিন।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এক মার্কার ভোট এক প্রার্থীর মার্কায় গিয়ে পড়বে, এটা এই মেশিন দ্বারা করা সম্ভব না। আমি সার্কিটগুলো খুলে দেখানোর জন্য বলেছিলাম। এটা ম্যালফাংশন করতেই পারে, ম্যালফাংশন করলে সেটা পরবর্তীতে অন্য মেশিন ব্যবহার করা যায়, কিন্তু ম্যানপুলেট করার কোনো সুযোগ নেই।

অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে (ইভিএম), ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটা বিষয় এমনভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, কেউ ইচ্ছা করলেই সেটা ম্যানিপুলেট করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, আমরা একটি স্মার্ট দেশ। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট দক্ষ। তাদের আমরা বিশ্বাস করতে পারি। এই প্রকল্পে যারা ছিলেন, তাদের যে কমিটমেন্ট তাতে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা খুব ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি, এটার ডিসপ্লে করা হবে, সেটা টেস্ট করতে পারবে যে কোনো নাগরিক। তারা এসে দেখতে পারবে যে, এখানে সবকিছু ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা।

রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে ড. কায়কোবাদ বলেন, তাদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের আইনে রয়েছে এবং সেটা তারা করবে। বায়োমেট্রিক সার্চ করে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করি। যে কোনো মেশিনের জন্য আধুনিকায়ন জরুরি এটার প্রতিটা ছোট ছোট অংশ যেভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, কেউ এসে এটাকে ম্যানিপুলেট করবে, এটা সম্ভব নয়। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, এই মেশিন থেকে শুধু ভোট দেওয়ায় নয়, ভোটের যত স্ট্যাটিস্টিকস আছে, সব ধরণের ব্যবস্থা রাখতে। আশা করি এগুলি ওনারা পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে করবেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/টিএস-০৭


সূত্র : বাংলানিউজ২৪.কম