‘বিশ্ববাজারে গম রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই প্রত্যাহারের কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে অন্যান্য দেশের সরকারের সাথে সরাসরি যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর চালান পাঠানো হবে।’ বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুশ গয়াল এই তথ্য জানিয়েছেন।

 


বিশ্বে গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী ভারতের তীব্র দাবদাহের কারণে গমের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং স্থানীয় বাজারে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত ১৪ মে দেশটির সরকার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির কিছু কিছু অঞ্চলে গমের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র অস্থিরতা তৈরি হয়। অন্যতম এই খাদ্যপণ্যের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।

 

বেসরকারিভাবে গমের রপ্তানি আবার শুরু করার অনুমতি দিতে নয়াদিল্লির কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা, জানতে চাইলে গয়াল বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে অস্থিরতা রয়েছে, আমরা যদি তা করি (নিষেধাজ্ঞা তুলে নিই) তাহলে সেটি কেবল কালোবাজারি, মজুতদার এবং মুনাফালোভীদের সহায়তা করবে। তখন এটি আসলেই যারা ঝুঁকিতে আছেন এবং যেসব দেশের জন্য প্রয়োজন তাদের কোনও সহায়তা করবে না।

 

বুধবার দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটি করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল সরকার থেকে সরকারের পথে রপ্তানি করা। এর মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্রদের সাশ্রয়ী মূল্যে গম শস্য দিতে পারি।

ভারতের গম রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ ও অন্যান্য অনেক দেশ। চলতি মাসে মার্কিন কৃষিমন্ত্রী টম ভিলস্যাক বলেছেন, ভারতের গম রপ্তানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

 

পীযুশ গয়াল বলেছেন, ভারতের গম রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করতে তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্ববাজারে গমের রপ্তানিতে প্রচণ্ড ধাক্কা আসে। খরা এবং বন্যার কারণে অন্যান্য প্রধান উৎপাদনকারীদের গমের উৎপাদন হুমকিতে পড়ে। যদিও ব্যবসায়ীরা আশা করছিলেন সরবরাহের ঘাটতি ভারত থেকে পূরণ হবে।

 

নিষেধাজ্ঞার আগে ভারত চলতি বছর রেকর্ড এক কোটি টন গম রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। জাতিসংঘের (ইউএন) তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম গত মার্চে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

 

সংঘাতের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম সূর্যমুখী তেল রপ্তানিকারক ইউক্রেন থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। এই সংঘাতের প্রভাব প্রাথমিকভাবে তেলের বাজারে শুরু হলেও পরবর্তীতে তা অন্যান্য প্রায় সব পণ্যের ওপর পড়েছে। ইউরোপের এই দেশটি ভুট্টা এবং গমের মতো খাদ্যশস্যেরও প্রধান উৎপাদনকারী। এসব পণ্যের দামও ব্যাপক বেড়েছে।

 

জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম গত এপ্রিলে সামান্য কমলেও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রয়েছে। ক্রমবর্ধমান খাদ্য মূল্য, জ্বালানির ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েছে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-৩৬
 


সূত্র : ঢাকাপোষ্ট