বন্যার পানি নামলেও রেখে গেছে ক্ষত। সিলেটের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্যায় ক্ষতবিক্ষত। বানের পানির তোড়ে ভেসে গেছে সড়কের পিচ। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গ্রামীণ সড়কের। সিলেট সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের (এলজিইডি) আওতধীন প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এগুলো মেরামতে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


বন্যার পানি নামায় সিলেট জেলা শহরের সাথে সকল উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সড়কের স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ। কোন কোন স্থানে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সিলেট নগরীর বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সড়কের পিচ। সড়কের উপর পড়েছে পলির আস্তরণ। তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সড়ক থেকে পলি অপসারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।



সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, বন্যায় নগরীর প্রায় অর্ধেক রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত ছিল। প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেলেও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এই সড়ক মেরামতে প্রয়োজন ৭০ কোটি টাকা। টাকার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আপাতত সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে রাস্তা থেকে পলি মাটি সরানো ও বিটুমিনের কাজ করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


সড়ক ও জনপথ সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত জানান, বন্যায় জেলার ১০টি সড়কের প্রায় ৮০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে চারটি সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শেওলা-সুতারকান্দি, দরবস্ত-কানাইঘাট, সারি-গোয়াইনঘাট ও সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সাময়িক সংস্কারের মাধ্যমে সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী করতে ৫-৬ কোটি টাকা লাগবে। আর স্থায়ী মেরামতের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৮০ কোটি টাকা। সাময়িক মেরামতের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে জানান উৎপল সামন্ত।


এদিকে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এলজিইডি’র আওতাভ‚ক্ত সড়কগুলো। বন্যা আক্রান্ত বিভিন্ন উপজেলার ১২০টি সড়কের ২৩০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর গণমাধ্যমকে জানান, সিলেট জেলায় এলজিইডি’র আওতাধীন ৭ হাজার ৫১০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে জেলার ১৩ উপজেলার ১২০টি সড়কের প্রায় ২৭৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।


সূত্র জানিয়েছে, বন্যার পানি নামার পর থেকে সিটি করপোরেশন, সওজ ও এলজিইডি ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করেছে। তবে আপাতত সাময়িক মেরামতের মাধ্যমে সড়কগুলোর ক্ষত ভরাট করে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। তবে স্থায়ী মেরামতের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে শুরু হবে স্থায়ী মেরামতের কাজ। তবে স্থায়ী মেরামত কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ না পেলে সড়ক সংস্কার কাজ বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে সিলেটে সড়ক যোগাযোগ অবস্থা বেহালেরও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/পিডি