সিলেটে প্রায় দুই সপ্তাহ দাপট দেখিয়ে গেলো ভয়াবহ বন্যা। মনে করিয়ে দিলো ২০০৪ সালের ভয়াবহ বানের স্মৃতি। এবারের বন্যায় সিলেটে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবাদিপশু ও গ্রামীণ অবকাঠামোকে। এছাড়াও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সুপেয় পানির উৎস নলকূপ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার।

 


জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সিলেটে বন্যার পানিতে প্রায় ১২ হাজার নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার প্রায় ৭৮ হাজার শৌচাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে জকিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৬ হাজার ৫০০ মিটার পানি সরবরাহের পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এ দুই খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা।

 

তবে সুপেয় পানির সংকট মেটাতে সিলেটের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। জেলার কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ কার্যক্রম চলছে। এ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার পানি পরিশোধন করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা এসব প্ল্যান্ট থেকে পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

 

এর বাইরে জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৬ লাখ ৬৩ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়েছে। ১০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১ হাজার ৪০০টি পানির জার এবং ৯০০টি বালতি দপ্তরটি বন্যার্তদের দিয়েছে।

এদিকে, সিলেটে বন্যার পানি নামতে শুরুর পর থেকে অনেক এলাকার ডুবে যাওয়া নলকূপ জেগে উঠেছে। যাদের নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিলো তাদের জন্য সিলেটের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দিয়েছে বিশেষ নির্দেশনা।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে- দূষিত পানি পানের কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তলিয়ে যাওয়া নলকূপ জেগে ওঠার পরপরই জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া উচিত। এটি করতে হলে প্রথমে ১২-১৫ লিটার পানি একটি বালতিতে নিয়ে ২০০-৩০০ গ্রাম পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার ভালোভাবে মেশাতে হবে। এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মিশ্রণ ছেঁকে নিতে হবে অথবা মিশ্রণ স্থির হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরে নলকূপের পাম্পের হাতল ও প্লাঞ্জার রড পাম্প থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। এরপর মিশ্রণের অর্ধেক পানি পাম্পের ভেতর ঢালতে হবে। পরে হাতল ও প্লাঞ্জার রড ভালোভাবে পরিষ্কার করে ময়লা বা কাদা সরাতে হবে। অতঃপর হাতল ও প্লাঞ্জার রড পুনরায় স্থাপন করে ঘোলা পানি দূর না হওয়া পর্যন্ত পাম্প করতে হবে।

 

পাম্পের সাহায্যে পর্যাপ্ত পানি পাওয়ার পরপরই অবশিষ্ট মিশ্রণ পাম্পের ভেতর ঢালতে হবে এবং ব্লিচিং পাউডার বা ক্লোরিনের গন্ধ থাকা পর্যন্ত পাম্প করতে হবে। সব শেষে নলকূপের আশপাশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন- নলকূপ কীভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, সেটা স্থানীয় প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম কিংবা সভা-সমাবেশে উপস্থিত মানুষদের বলে দেওয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়েও এ সচেতনতা চালাচ্ছেন। দপ্তরের ফেসবুক পেজেও তা বারবার জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই যেন কেউ নলকূপ জীবাণুমুক্ত না করে পানি পান না করেন, এ মেসেজটা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেশি করে প্রচার চালাতে হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম