মহান আল্লাহ যেমন বান্দার ভালো কাজ পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট হন, তেমন মন্দ কাজ ঘৃণা করেন এবং তাতে ক্ষুব্ধ হন। কোনো বান্দা আল্লাহর ঘৃণার পাত্র হলে পৃথিবীতেও তাঁর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যদি কোনো বান্দাকে পছন্দ করেন তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক লোককে পছন্দ করি, তুমিও তাকে পছন্দ করো। তিনি বলেন, তখন জিবরাইল (আ.) তাকে পছন্দ করেন।

অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীতে ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক লোককে পছন্দ করেন, সুতরাং তোমরাও তাকে পছন্দ করো। তখন আকাশবাসীরা তাকে পছন্দ করে। তিনি বলেন, এরপর দুনিয়াতে তাকে নন্দিত, সমাদৃত করা হয়। আর আল্লাহ যদি কোনো লোকের ওপর রাগ করেন তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, আমি অমুক বান্দার ওপর রাগ করেছি, তুমিও তার প্রতি নারাজ হও। তিনি (সা.) বলেন, তখন জিবরাইল (আ.) তার ওপর রাগান্বিত হন। তারপর তিনি আকাশবাসীদের ডাক দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অমুকের ওপর রাগান্বিত। কাজেই তোমরাও তার ওপর ক্রোধান্বিত হও। তিনি বলেন, তখন লোকেরা তার ওপর শত্রুতা পোষণ করে। তারপর তার জন্য পৃথিবীতে শত্রু তৈরি করা হয়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৯৮)
আল্লাহর ভালোবাসা ও ক্রোধ শুধু মানুষের প্রতিই প্রকাশ পায় না; বরং অন্যান্য বিষয়ের ব্যাপারে প্রকাশ পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীতে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদগুলো আর সব চেয়ে ঘৃণিত জায়গা হলো বাজারগুলো। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)


আল্লাহ অপছন্দ করেন এবং ক্ষুব্ধ হন—এমন কাজ করা মুমিনের জন্য গুরুতর পাপ। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৫৮)

এই আয়াতের ব্যাখ্যা আল্লামা শিনকিতি (রহ.) লেখেন, আল্লাহ কোনো বিষয় পছন্দ করেন না—এর অর্থ হলো এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি গুরুতর অপরাধ ও কবিরা গুনাহে লিপ্ত। (আল-আজবুন নামির : ৫/১৪৪)

পাপাচার, সীমালঙ্ঘন ও আল্লাহর অবাধ্যতা আল্লাহকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের যা দান করেছি তা থেকে ভালো ভালো জিনিস খাও এবং এই বিষয়ে সীমালঙ্ঘন কোরো না। করলে তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যার ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়। ’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৮১)

কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহর ক্ষোভ বৃদ্ধি পায় এবং তা কখনো কখনো হ্রাসও পায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘...কাফেরদের কুফরি শুধু তাদের প্রতিপালকের ক্রোধই বৃদ্ধি করে এবং কাফিরদের কুফরি তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৯)

আল্লাহর ক্রোধ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ কোনো কোনো জাতিকেও ধ্বংস করে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, আমি তাদের শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করলাম তাদের সবাইকে। অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদের করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৫৫-৫৬)

আল-মাউসুয়াতুল আকাদিয়া

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-২১


সূত্র : কালের কণ্ঠ