বিয়ানীবাজার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা ও কুশিয়ারা এবং সুনাই নদীর পানি বাড়ছে।
বুধবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদী দুইটিও অবস্থা প্রায় একই। বন্যা কবলিত হওয়ার উপজেলার ১১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্যা দূর্গত এলাকায় ৩৪টি বিদ্যালয় আস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে।
এদিকে বুধবার বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখানকার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বেশীরভাগ এলাকা পানির নীচে তলিয়ে আছে। কুশিয়ারার একাধিক ডাইক ভেঙ্গে এবং সুরমা ও সুনাই নদীর ডাইক উপচে লোকালয়ে পানি ডুকা অব্যাহত আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বিকালে থেকে কুশিয়ারা নদীর বালিঙ্গা এলাকায় একটি অংশে ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ায় এটি দিয়ে হু হু করে প্রবল স্রোতে পানি এসে আশপাশের ১০ টি গ্রাম প্লাবিত করেছে। উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত আছে। তবে এখনও তা চাহিদার তুলনায় কম। সময় সময় বন্যা কবলিত এলাকার পরিধি বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্গত মানুষের সংখ্যা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার প্রায় সবক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া ও মোল্লাপুর, ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে এসব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন।
সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা, মুড়িয়া ও তিলপাড়া ইউনিয়নের বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জলঢুপ-লাতু সড়কের অনেক স্থান তলিয়ে গেছে। একই সাথে নাওলা, দক্ষিণ পাহাড়িবহরসহ আশপাশ এলাকা ডুবে গেছে।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে বিতরণের ধীরগতিতে এখনও অনেক দুর্গত এলাকার মানুষ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রোমান মিয়া বলেন, এখানকার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮২টিতে বন্যার পানি হানা দিয়েছে। এরমধ্যে ২৪টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান জানান, উপজেলার ৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা) মধ্যে ৪০টিতে বন্যার পানি ওঠেছে। অন্যগুলোর মধ্যে ১০টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বন্যায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গবাদি পশু-পাখিও ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনই জানাতে পারছেনা স্থানীয় প্রাণীসম্পদ কার্যালয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক নূর জানান, বন্যা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাদের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে তাদেরকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/এটিআর/এসডি-০৮