পদ্মাসেতুর টোলের টাকায় সেতুর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, নদী শাসন ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া ঋণও পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। এর জন্য অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে ঋণচুক্তি হয়েছে, তার মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩৫ বছর।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, সেতু নির্মাণে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ বছরে সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।


লোন রিপেমেন্ট শিডিউল অনুযায়ী প্রথম বছরেই ৫৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আবার কোনও কোনও বছর পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত।

গত ১৭ মে পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা করছে, প্রথম বছরে টোল আসবে ১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টোলের বেশিরভাগ টাকা দিয়ে সরকারের ঋণ পরিশোধ করা হবে। বাকিটা খরচ হবে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে।

প্রতিমাসে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরে আসবে প্রায় ১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। তবে সময়ের সঙ্গে আদায়কৃত টোলের পরিমাণও বাড়তে থাকবে।

জানা গেছে, সেতু কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সঙ্গে চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ মোতাবেক ঋণের অর্থ প্রকল্প সমাপ্তির পর বার্ষিক ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে ১৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া, নকশা প্রণয়নের সময় নেওয়া ২১১ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধ করতে হবে ৩৪০ কোটি টাকা।

গত ১৭ মে সেতু কর্তৃপক্ষের জারি করা টোল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুতে বড় বাসের টোল হবে ২ হাজার ৪০০ টাকা, মোটরসাইকেলের ১০০ টাকা, কার ও জিপের ৭৫০ টাকা, পিকআপের ১ হাজার ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের জন্য ১ হাজার ৩০০ টাকা।

মাঝারি বাসের টোল হবে ২ হাজার টাকা, চার এক্সেল ট্রেলারের ৬ হাজার টাকা এবং মিনিবাসের (৩১ সিট বা তার কম) টোল ১৪০০ টাকা।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান টোল হারকে ভিত্তি ধরে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে বর্তমান টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে মাওয়া-জাজিরা রুটের ফেরিতে বর্তমানে চলাচলকারী যানবাহনের (নভেম্বর ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী) আদায়কৃত টোল হার অনুযায়ী মাসে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও বছরে ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় হয়। এর দেড়গুণ তথা মাসে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হিসাবে বছরে ১০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা টোল আদায় হওয়ার কথা।

অন্যদিকে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১০ সালে দাখিলকৃত পদ্মা সেতুর ডিটেইলড ইকোনমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার আশা করছে বছরে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা টোল আদায় হবে।

২০২২ সালের ট্রাফিক ফোরকাস্ট হিসাবে ফেরির টোল হার দেড়গুণ ধরে মাসে টোল আদায় হয় ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। ৩৫ বছরে সরকারকে সুদে-আসলে ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধ, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ, নদীশাসন এবং আদায়কৃত টোলের ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধে টাকা প্রয়োজন। এ টাকা টোল থেকে সংগ্রহ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে