বানভাসিরা ঘরে ফিরতে না ফিরতেই আবার সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের মধ্যে নতুন করে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। গত ১৪ দিন ধরে বন্যার পানির সাথে যুদ্ধ করছেন জেলার ৯০ ভাগ পানি বন্দি মানুষ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, নতুন করে আবার বাঁচার আকুতি শুরু হয়েছে।

 


গেল কয়েক দিন আকাশে রৌদ এবং পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। আশা নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করছিলেন। চলতি বন্যার পানি ঘর বাড়িতে থাকায় বাড়ি ফিরতে পারেননি জেলার ৬৫ হাজার মানুষ। আশ্রকেন্দ্রে এবং বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসিরা।

 

চলমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে গত দুইদিন ধরে থেমে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে বাড়ী ঘরে পানি উঠছে শুরু করেছে। জেলা, উপজেলা ও গ্রামীন রাস্তঘাট আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারি বৃষ্টি এবং হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে হাওর পাড়ের বাড়ি ঘর তছনছ হয়ে যাচ্ছে। বন্যা কবলিত গ্রামবাসীরা গবাদিপশু, ধান চাল ও নিজেদের জীবন নিয়ে উচু এলাকায় যেতে দেখা গেছে।

বুধবার রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। আকাশে ঘন ঘন বজ্রপাতের গঞ্জন হচ্ছে। চারদিকে বৈরী আবহাওয়ায় অন্ধকার হয়ে আছে। তাহিরপুর উপজেলা সহ জেলার সব কয়টি উপজেলার জেগে উঠা ক্ষত বিক্ষত রাস্তাঘাট এবং বাড়ির উঠানে পানি উঠেছে এবং নিচু এলাকার ঘরে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া জেলার অধিকাংশ বাজার, মসজিদ, স্কুল মাদ্রাসা,অফিস আদালতে নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে।

 

তবে, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানিয়েছেন, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। আগের বন্যার তুলনায় এখনকার পানি কিছুটা কম আছে।

তিনি বলেছেন, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব,বিজিবি এবং সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো প্রস্তুত রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২৪-৪৮ ঘন্টায় বাংলাদেশের উত্তাঞ্চল, উত্তর-পূবাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ২৪ ঘন্টা দেশের উত্তর-পূবাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছে। আবাহওয়া পূর্বাভাস ও ফের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভানবাসি মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৮৫ মিলিমিটার। ফলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ কয়েকটি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় সুরমা নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ৭.৭৫ সেন্টি মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এদিকে দুই দফা বন্যায় জেলার লক্ষাধিক কাঁচা-আধাকাচা, টিন সেটের ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের ঘর বেড়া, টিন বানের পানিতে ভেসে গেছে। হাওরের ঢেউয়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে বাড়ীঘর। বন্যা পরবর্তি পুনবার্সন নিয়ে দুঃচিন্তায় বানভাসি পরিবার। বন্যার পানির সঙ্গে বিদুতের খুটির তার লেগে থাকায় বুধবার বিকালে তাহিরপুরে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে এবং দুই শিশু মারাত্বক আহত হয়েছে।

 

তাহিরপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের তোষা মিয়া বলেন, বন্যা আমার বাড়ি ঘর সব নিয়ে গেছে। আমি বড় অসহায় হয়ে গেছি। নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণের সামর্থ্য আমার নেই।

বালিয়াঘাট গ্রামের সুহেল বলেন, বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তার সেরে উঠা সম্ভবনা, নতুন করে আবার বন্যা শুরু হয়েছে। সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে যাওয়ায় যায়গা নেই আমাদের। সুফিয়া নামে একজন বন্যা পরবর্তি সময়ে বানভাসিদের পুনবার্সন করার দাবি জানান তিনি।

 

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপন করা হচ্ছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে তালিকা আমাদের কাছে চলে আসবে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চলে আসলে পুনবার্সনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। জেলা উপজেলায় সরকারি বেসরকারি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন বানভাসীরা।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এমএআর/এসডি-১৬