উপর্যপরি বন্যায় সিলেটের কৃষিতে এখন হাহাকার। এক বন্যা যেতেই আরেক বন্যার থাবায় এ অঞ্চলের ৮৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে লেগেছে ক্ষতির ধাক্কা। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। দায়িত্বশীলরা বলছেন, এ ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৬শ’ কোটি টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে ধাক্কা সামলে ওঠতে পারেন, সেজন্য তাদেরকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যানুসারে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় ৮৫ হাজার ৪৫৬ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধানের ক্ষতিই হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ ধানের ৬৩ হাজার ৪১৭ হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর বোনা আমন এবং ৭ হাজার ৩৩৯ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির তথ্য বলছে, সিলেট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে ২৬ হাজার ২৭৯ হেক্টর আউশ ধান এবং ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি।

সুনামগঞ্জে ক্ষতির মুখে পড়েছে ১৩ হাজার ৮০৩ হেক্টর ফসলি জমি। তন্মধ্যে আউশ ধান ১১ হাজার ৪০৩ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি ২ হাজার ৪০০ হেক্টর।

১২ হাজার ৭৩৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬৩৭ হেক্টর আউশ ধান, ৩৬৫ হেক্টর বোনা আমন এবং ৭৩৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি রয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার ৯৭০ হেক্টর ফসলি জমিতে। যেখানে আউশ ধান ১৪ হাজার ৯৮ হেক্টর, বোনা আমন ১৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি ১ হাজার ৫৩৭ হেক্টর রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মে মাসের বন্যায় শুধু ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু মধ্য জুনে আঘাত হানা বন্যায় ফসলি জমির সাথে সাথে অসংখ্য কৃষকের গোলার ধানও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জানতে চাইলে সিলেট বিভাগীয় কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান সিলেটভিউকে বলেন, ‘উপর্যপরি বন্যায় সিলেটের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আমাদের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয়শ কোটি টাকা। তবে অনেক কৃষকের গোলার ধান ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে। এগুলোর প্রকৃত হিসাব পাওয়া কঠিন।’

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এখন উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত। বিশেষ করে যারা জমির ফসলের উপর নির্ভর করে জীবিকা চালান, তারা আছেন গভীর সংকটে।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের কৃষক হুশিয়ার আলী বলছিলেন, ‘প্রথমে বন্যায় জমির ফসল নিল, এরপর বন্যায় ঘরে থাকা ধানেরও ক্ষতি করেছে। এসব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠবো কিভাবে, আল্লাহই জানেন।’

অবশ্য কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

সিলেট বিভাগীয় কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান সিলেটভিউকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে প্রায় ৩০ হাজার কৃষককে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়েছে। সামনে আরও কৃষক এর আওতায় আসবেন। পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হচ্ছে।’
 
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে