বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ভানবাসি মানুষকে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানোর লক্ষে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথম ভাসমান পানি বিশুদ্ধকরণ ও বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। 


রোববার (৩ জুলাই) বিকেলে সিলেট সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা নদীর পাড়ে চরের বন গ্রামে ভাসমান পানি বিশুদ্ধকরণ ও বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন। 



এসময় এলাকার মুরব্বিয়ান, সমাজসেবী, যুবসমাজের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেষার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। 


উদ্বোধন কালে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, বন্যার্ত এলাকায় ডায়রিয়া সহ পানি বাহিত রোগ হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধের লক্ষে শামসুল হক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নদীর উপর ভাসমান পানি বিশুদ্ধকরণ ও বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে প্রতিদিন বন্যার্ত  ৫ হাজার পরিবার ফ্রী বিশুদ্ধ খাবার পানি পাবেন। তিনি বলেন, ইঞ্জিন চালিত নৌকার উপর পানির প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে নদী থেকে পানি উঠিয়ে ৫টা স্টেপে বিবিধ ফিল্টার ও মেমব্রেনের মাধ্যমে পানি পরিশোধিত হচ্ছে। পানি নিতে আসা অনেকেই পাত্র আনতে পারেন নি। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০ লিটার ক্যাপাসিটর গ্যালনে দেওয়া হয়েছে, পানি পেয়ে বন্যায় সর্বস্ব হারানো মানুষজন আনন্দিত। তিনি বলেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও সেবার লক্ষে মানব সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।


এর আগে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে সিলেট সদর উপজেলা, গোলাপগঞ্জ উপজেলা, জকিগঞ্জ উপজেলা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, শাহপরান থানা, মৌলভীবাজার উপজেলা, বড়লেখা উপজেলা, কানাইঘাট উপজেলা, গোয়াইনঘাট উপজেলা, সুনামগঞ্জ, ছাতক, দুয়ারা সহ বিভিন্ন উপজেলা ও বন্যাকবলিত গ্রাম গুলোতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্হ পরিবারের মধ্যে ত্রান ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। 


ভাসমান পানি বিশুদ্ধকরণ ও বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রমের এই প্রকল্প নদী হাওর এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করবে।


পানির কোয়ালিটি তুলনামূলক বেশী খারাপ সে এলাকায় ভাসমান পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্প পৌঁছে যাবে। নির্দিষ্ট ৩টি এলাকায় বসছে ৫ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক। এই ট্যাংকে ভাসমান প্রকল্প থেকে পানি ভর্তি করে দেয়া হবে। লোকজন নির্দিষ্ট ট্যাংক থেকে পানি নিয়ে যাবে। একই সাথে সরাসরি ভাসমান প্রকল্প থেকেও পানি বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
ইলেক্ট্রিসিটি ও দূরে বা বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর দিয়ে প্রকল্পের পানি বিশুদ্ধকরণ অব্যাহত থাকবে। 


নৌকার লাইট, চার্জিংয়ের জন্য রয়েছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা। সকল মেশিনারীজ, ইঞ্জিন চালিত নৌকা সহ ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং আগামী এক বছর ধরে চালানো প্রকল্প ব্যয় ১৫ লক্ষ টাকা মিলে মোট ৩৫ লক্ষ টাকার প্রকল্ল বলে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন জানিয়েছেন।


তিনি জানান, আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন গত বন্যায় সিলেটে যেরূপ কাজ করেছে এবারের বন্যায়ো আরো নানাবিধ কর্মসূচি নিয়ে বন্যার্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় এক কোটি টাকার বাজেটে প্রথমদিকের উদ্ধারকার্য, শুকনো খাবার বিতরণ, হট মিল ইত্যাদির পাশাপাশি বন্যার্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে এখন চলছে গৃহ বিনির্মাণ ও স্ব-নির্ভর কর্মসূচি। বিভিন্ন স্থানে জরুরী চাহিদা অনুযায়ী নৌকা বিতরণ কর্মসূচিও চলছে। এই পানির প্লান্ট আগামীতে কখনো যদি মুভেবল অবস্থার প্রয়োজনীয়তা কমে যায় তবে সিলেট সুনামগঞ্জে পানির কোয়ালিটি সবচেয়ে খারাপ এমন স্থানে প্রকল্পটা স্থায়ীভাবে স্থাপন করে দেয়া হবে।


উল্লেখ্য আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় বাংলাদেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রতিদিন চলমান মেহমানখানা, মুসাফির খানা, কুড়িগ্রাম ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নামাবিধ মানবিক কর্মসূচির জন্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/সবি/ইআ