নতুন জনশুমারিতে বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার পর তুমুল আলোচনা। কীভাবে এটা ঘটল- তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির হচ্ছে।

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন।


অর্থাৎ নারীর সংখ্যা বেশি ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮২ জন।

২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। সে সময় পুরুষের সংখ্যা বেশি ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৫ জন।

ওই বছর প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিল ১০০ দশমিক ৩০ জন।

এর আগের ২০০১ সালের আমদশুমারিতে পুরুষের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। ওই বছর দেশে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ পাওয়া যায় ১০৬ দশমিক ৪০ জন।

অর্থাৎ কেবল গত ১০ বছরেই নয়, এর আগে থেকেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।

কিন্তু এই পরিসংখ্যানে এই সিদ্ধান্তে আসা কি সম্ভব যে দেশে ছেলের তুলনায় মেয়ে শিশুর জন্ম বেশি হচ্ছে? জনসংখ্যা ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন দুজন ব্যক্তির মত নিলে জবাব আসে ‘না’।

জনশুমারিতে একটি নির্দিষ্ট দিনে দেশে অবস্থানের হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি থাকে, যাদের হিসাব এই শুমারিতে আসেনি।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, তাদের হিসাবে এক কোটি বাংলাদেশি দেশের বাইরে থাকেন। এদের মধ্যে সাত থেকে আট লাখ নারী। অর্থাৎ পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ৯২ থেকে ৯৩ লাখ, যারা আসলে এই শুমারিতে হিসাবে আসেননি।

এই এক কোটির সবাই আবার বৈধ কর্মী। এর বাইরে আরও লাখো প্রবাসী আছেন, যারা অবৈধ পথে দেশ ছেড়েছেন। নিঃসন্দেহে এদের মধ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত বৈধ পথে যাওয়াদের অনুপাতের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ছেড়ে প্রবাসে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা নিঃসন্দেহে গত দুই দশকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এখন বছরে ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ দেশের বাইরে কাজ করতে বা পড়াশোনা করতে যায়।

এর বাইরে আরও একটি বিষয়কে সামনে আনতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম। নারীদের আয়ুষ্কাল বেশি হওয়াকেও একটি কারণ হিসাবে দেখাতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। আর পুরুষদের ৭১.১ বছর। আবার জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৫ বছর, যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর। অর্থাৎ বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় ৩-৪ বছর বেশি।’

তবে অভিবাসন ও নারীর আয়ু বেশি হওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবের জন্য জনশুমারির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পাশাপাশি আলাদা গবেষণার প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে


সূত্র : নিউজবাংলা