সিলেটের ওসমানীনগরে বাসা থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার ও পরে দুজনের মৃত্যুর ঘটনা নতুন মোড় নেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে- ওই বাসায় সেদিন রাতে চালিত জেনারেটরের ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি। তবে ফরেনসিক ও ক্যামিকেল রিপোর্ট আসার পরই চূড়ান্তভাবে ধোঁয়াশা কাটবে। দ্বিতীয়বারের মতো বুধবার (৩ আগস্ট) ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এমন মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন প্রবাসী মা ও ছেলে। বাসায় ফেরার পর পুলিশ তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে মেয়ে সামিরা ইসলামের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।


গত ২৫ জুলাই ওসমানীনগরের তাজপুর বাজারের মঙ্গলচন্ডি স্কুল রোডের একটি বাসার একটি কক্ষ থেকে একই পরিবারের ৫ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজন মারা যান। মৃত দুজন হলেন- ওসমানীনগর উপজেলা দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই (খাতুপুর) গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) এবং রফিকুলের ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৬)।

ঘটনার পর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম (৪৫), বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ দিনের মাথায় হুছনারা বেগম ও সাদিকুল ইসলাম সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও সামিরা ইসলাম এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। একবারের জন্যও তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। তিনি এখনও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। এখনও সামিরার কিডনি ও লিভার কাজ করছে না।
 
এ বিষয়ে ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল গাফ্ফার বুধবার বিকেলে সিলেটভিউ-কে বলেন, হুছনারা বেগম ও সাদিকুল ইসলাম এখন পুরোপুরি সুস্থ। আজ তারা বাসায় ফিরে গেছেন। তবে তাদের কিছু ওষুধ এখনও চলছে।

তিনি বলেন, এ দুজন সুস্থ হলেও সামিরা এখনও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আইসিইউতে আছেন। একবারের জন্যও তাঁর জ্ঞান ফেরেনি এবং কিডনি ও লিভার আগের মতোই কাজ করছে না। 

রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সিলেটভিউ-কে বলেন, আজ আমরা আবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এসময় হুছনারা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে অনেকটা বুঝা যাচ্ছে যে- ওই রাতে তাদের বাসায় যে জেনারেটর চলছিলো সেটি থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। প্রথম জিজ্ঞাসাবাদের সময় এবং আজও হুছনারা আমাদের বলেছেন- ওই জেনারেটর যখনই চালু করা হতো তখন তার ছোট ছেলে (মারা যাওয়া) মাইকুলের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যেতো। ওই রাতেও জেনারেটরের প্রচুর ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে নিঃশ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে প্রবাসীদের এমন অবস্থা হতে পারে। সে সম্ভাবনাই বেশি। তবে চূড়ান্তভাবে বলা যাবে বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর। 

তিনি বলেন, আমরা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে জেনারেটরের কিছু ধোঁয়া সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফায়ার সার্ভিসের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষা, ময়না তদন্ত, ফরেনসিক ও খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পেলে চূড়ান্তভাবে বলা যাবে। 

ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, আমরা আজ যত সময় ওই বাসায় ছিলাম এর মধ্যে কিছু সময় জেনারেটর চালু ছিলো। এই কিছু সময়ের মধ্যে আমাদের মাঝে অস্বস্তিকর অবস্থা শুরু হয়। তাই আমাদের ধারণামতে- বিষয়টি জেনারেটরের বিষাক্ত ধোঁয়া থেকেই হতে পারে। 

উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। এরপর ঢাকায় একসপ্তাহ থেকে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ২৫ জুলাই সোমবার রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানাপুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। 

ঘটনার পর দিন ময়না তদন্ত শেষে পিতা-পুত্রের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়। ওইদিন বিকাল ৩টায় দয়ামীর ইউনিয়নের পারকুল মাদরাসা মাঠে বাবা-ছেলের জানাজা শেষে খাতুপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম