সিলেটের ওসমানীনগরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া প্রবাসী রফিকুল ইসলামের মেয়ে সামিরা ইসলামের জ্ঞান এখনো ফিরেনি। ঘটনার ১০ দিনেও তার শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিথর অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছে সে। তার শরীরের কিডনি ও লিভারসহ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করছে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।


গত বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওসমানীনগরের তাজপুরস্থ স্কুল রোডের বাসায় ফিরে যান সামিরার মা হোসনে আরা বেগম ও ভাই সাদিকুল ইসলাম। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলেও তাদেরকে আরও কয়েকদিন নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আবদুল গাফ্ফার।



তিনি জানান, গত ২৬ জুলাই অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মা ও ছেলেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একবারও সামিরার জ্ঞান ফিরেনি। তার কিডনি ও লিভারসহ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করছে না। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।


এদিকে, গত বুধবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি হাসপাতাল ফেরত হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় হোসনে আরা পুলিশ সুপারকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে বাসার ভেতর জেনারেটর চলতো। জেনারেটর চালুর পর তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হতো। বাসায় জেনারেটর চালু করে পুলিশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। জেনারেটর চালুর পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। পুলিশের ধারণা ঘটনার রাতে দীর্ঘসময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ও অপর এক ছেলে ও মেয়ে। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরণের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানা হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতে পুলিশ মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, সাধারণত বাসা-বাড়িতে জেনারেটর বাইরে থাকে। কিন্তু ওই বাসার ভেতরে জেনারেটর ছিল। পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য বাসার জেনারেটর চালু করা হলে কিছুক্ষণ পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার রাতে দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালু থাকায় ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে এই ট্র্যাজেডি ঘটতে পারে। তবে এখনো নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। জেনারেটরের ধোঁয়া সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিসের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ধোঁয়া থেকে কি ধরণের বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে পরীক্ষার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে তা জানা যাবে।


এই ট্র্যাজেডির প্রকৃত কারণ জানতে মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।


প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। এরপর ঢাকায় একসপ্তাহ থেকে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন । ২৫ জুলাই সোমবার রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানাপুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙ্গে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ