সুনামগঞ্জের ছাতকে আছলিমা তালুকদার (১৯) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে নানা ধূমজালের সৃষ্টি হয়েছে। রহস্যজনক এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বামীর বাড়ি ও পিত্রালয়ের লোকজনের মধ্যে পাওয়া গেছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। 

গৃহবধূ আছলিমা তালুকদার ছাতক পৌর শহরের ভাজনা মহল মহল্লার গোলাম কুদ্দুছের পুত্র সাইফুর রহমান সুয়েবের স্ত্রী এবং জাউয়াবাজার ইউনিয়নের খিদ্রা কাপন গ্রামের মৃত সুরত মিয়া তালুকদারের কন্যা। তিন মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। সাইফুর রহমান সুয়েব বিমান বাহিনীতে কর্মরত।


তার স্বামীর বাড়ির পরিবারের সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বসত ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন আছলিমা তালুকদার। ওই সময় স্বামীর বাড়ির কোন লোকজন ঘরে ছিলোনা। 

একই গ্রামের বাসিন্দা সাইফুর রহমান সুয়েবের মামা আইনুল হক জানান- বিকেল ৫ টার দিকে সাইফুরের ছোট ভাই তার বাড়িতে গিয়ে জানান, আছলিমা ঘরের ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়েছে। তিনি দ্রুত তাদের বাড়িতে এসে অন্যান্যদের সহযোগিতায় ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে সুয়েবের বাড়িতে পুরুষ না থাকায় ছাতক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালের এম্বুল্যান্সে করে তিনি তাকে সিলেট নগরের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। 

বিকেলে তিনি আছলিমা তালুকদারের মা ও বোনকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন বলে জানান। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই গৃহবধূর লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় ছাতক থানা পুলিশ। 

এসময় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রঞ্জয় চন্দ্র মল্লিক ও  এস আই মাসুদ রানা সহ ছাতক থানার পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা। 

সুয়েবের ছোট ভাই আতিকুর রহমান রিয়াদ জানান- তিনি কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেছেন। ইতিমধ্যে আছলিমা তালুকদার এর লাশ বাড়িতে আনা হয়েছে। তার ভাই চাকুরী করেন বিমান বাহিনীতে। তাদের পরিবারে কোনো কলহ নেই।

আছলিমা তালুকদারের চাচা রেজা মিয়া তালুকদার জানান- তার ভাতিজিকে স্বামীর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আছলিমা মারা যাওয়ার পরও তাদেরকে খবর দেয়া হয়নি। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তার অন্য এক ভাতিজি ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে খবর জানিয়েছেন। খবর পেয়ে পিত্রালয়ের লোকজন এ বাড়িতে পৌঁছাতে রাত ১১ টা বেজে গেছে। তাদের পরিবারে অনেক গড়মিল ছিলো।
 
তিনি আরও বলেন- এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে আমাদের কাছে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে। আমরা থানায় মামরা করবো। 

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর রশিদ আহমেদ খছরু জানান, বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে তিনি আত্মহত্যার খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় তারা হাসপাতালে ছিলো। সন্ধ্যায় লাশ নিয়ে এসেছেন। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ মর্গে প্রেরণ করেছে। শুক্রবার বাদ জুম্মা মেয়ের পিত্রালয় খিদ্রাকাপন গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে- রাতে বাড়িতে এসেছেন সাইফুর রহমান সুয়েব। বাড়িতে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি ছাতক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছে আতিকুর রহমান রিয়াদ।

ছাতক থানার এসআই মাসুদ রানা জানান, এ ঘটনায় থানায় এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। 

সিলেভিউ২৪ডটকম/মাহবুব/মুন্না