আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর যুগপৎ আন্দোলন’ গড়ে তুলতে সমমনা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপ প্রায় শেষ করেছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে দলটি। বামপন্থী আরও দুটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহী তারা। কিন্তু দল দুটি থেকে এখনো আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। দল দুটি বিএনপির সঙ্গে না বসলে এখানেই শেষ হবে প্রথম পর্বের সংলাপ। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের মিত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ সংলাপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

 


বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বে সংলাপ হচ্ছে না। কারণ তারা বিএনপির সঙ্গে সংলাপে রাজি হয়নি। অন্যদিকে বিএনপিও খুব বেশি আগ্রহ দেখানি। তবে, বিএনপির পক্ষ থেকে বামপন্থী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপ বসতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


তারা বলছেন, ইতোমধ্যে দল দুটির সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটের সম্পর্কের বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। যার ফলে, এখন পর্যন্ত দল দুটির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। শুধু তারাই নয়, বিএনপির সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের জোট থাকা নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপে যাবে না বিএনপি।

 

আমাদের প্রথম পর্বের সংলাপ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরও দুটি দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে সংলাপ না হলে এখানে সিপিবি-বাসদ নেতারা বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এর আগে বলতে হবে কি বিষয়ে বা এজেন্ডা নিয়ে সংলাপ করতে চায় দলটি। সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরুক তারা। জনগণ যদি সেটা গ্রহণ করে তখন আমরা প্রয়োজন হলে সংলাপ করব। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সংকট সেটা আগেও ছিলো। বিএনপিও রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলে। তারাও আওয়ামী লীগের মতো মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছিল। তাদের আমলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। তখন গণতন্ত্রের সংকট ছিল। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারলে সেই ভুলগুলো আর করবে না এর নিশ্চয়তা দিক তারা। আর ২০১৩ সালে সিপিবি-বাসদ যখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপ করেছিল, তখন বলেছিল যুদ্ধাপরাধী ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদের সেই বক্তব্য এখনো পরিষ্কার।


সংলাপের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের প্রথম পর্বের সংলাপ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরও দুটি দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে সংলাপ না হলে এখানে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষ হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তো এখন আর নেই। যার কারণে ওই জোটে যারা ছিল তাদের প্রত্যেক দলের সঙ্গে আমরা আলাদা-আলাদা সংলাপ করেছি।

 

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক না যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তাদের ছাড়তে হবে। তাদের সঙ্গে বিএনপির জোটগত সম্পর্ক ছিল। এখন যেহেতু ২০ দলীয় জোট নেই, ফলে কোনো সম্পর্কও নেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই নেতা আরও বলেন, জামায়াত ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। এখন যেহেতু জোট নেই ফলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্কও নেই। এরপর যদি জামায়াতের ইস্যুটি যদি সামনে এনে সিপিবি-বাসদ বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করতে আগ্রহী না হয় তাহলে আর কিছু করার থাকবে না।

 

এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির এই নেতা আরও বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক না যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তাদের ছাড়তে হবে। তাদের সঙ্গে বিএনপির জোটগত সম্পর্ক ছিল। এখন যেহেতু ২০ দলীয় জোট নেই, ফলে কোনো সম্পর্কও নেই। তাছাড়া জামায়াত ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। তাহলে এখানে তাদেরকে ছাড়ার আর কী বাকি আছে?

 

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমাদের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। সংলাপে বসতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা তো ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, গণতন্ত্রের সংকট ছিল। আগামীতে তারা ক্ষমতা গেলে সেগুলো আর করবে না তার নিশ্চয়তা দিক। তাছাড়া আমরা ২০১৩ সালের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা করা সম্ভব নয়, সেটা বলে এসেছি। আমরা এখনো সেই বক্তব্যেই আছি। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে আমরা নিষিদ্ধের দাবি করে আসছি।

এখন সারাদেশে আমাদের দলের প্রোগ্রাম চলছে। সেটা আর কিছুদিন চলবে। ফলে, এখন বিএনপির সঙ্গে বসা সম্ভব নয়।


বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক, বাসদ তিনি বলেন, এখন সারাদেশে আমাদের দলের প্রোগ্রাম চলছে। সেটা আর কিছুদিন চলবে। ফলে, এখন বিএনপির সঙ্গে বসা সম্ভব নয়।

বাসদের এই নেতা আরও বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বললে মনে করে তাদের সঙ্গে চলে গেছি। আবার বিএনপির সঙ্গে কথা বললে একই কথা উঠবে। কারোর সঙ্গে কথা বললে বা সংলাপ করলে তাদের সঙ্গে জোট করতে হবে বিষয়টি তো এমন নয়।

 

গত ২৪ মে সরকার বিরোধী বৃহত্তর যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এ পর্যন্ত ২৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে দলটি। আসম আবদুর রবের জেএসডি, মোস্তফা মোহসিন মন্টুর গণফোরাম, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, রেজা কিবরিয়া গণঅধিকার পরিষদ।

 

আর ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জাতীয় দল, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক দল (ডিএল), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ, ন্যাপ-ভাসানী ও বাংলাদেশ ন্যাপ।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ঢাপো/ইআ