জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট চার দিনের সফরে আগামীকাল রোববার ঢাকায় আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সরকারের অন্তত চারজন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। এ ছাড়া নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। এ সফরে প্রধানত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং এ প্রসঙ্গে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কথা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

যেকোনো দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মানবাধিকার-বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা এবং হাইকমিশনারের বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এ জন্য এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সরকার ও জাতিসংঘের ঢাকায় অবস্থিত অনেক কর্মকর্তা।


মিশেল ব্যাচেলেটের এই সফরের সময় বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১০টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১০ আগস্ট এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট যদি পরিষ্কারভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও প্রবণতার সমালোচনা এবং সংস্কার দাবি করতে ব্যর্থ হন, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাঁর নীরবতাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কাজে লাগাবে। এতে মানবাধিকারকর্মীদের ছোট করা হবে।

গুম, নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বুদ্ধ করা উচিত বলে সংগঠনটি মনে করে।

মিশেল ব্যাচেলেটের ঢাকা সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের সফর বলে এই সফরের গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিত আছে। জেনেভা [জাতিসংঘ দপ্তর] থেকে রেপোর্টিয়াররাও অনেক দেশ সফর করে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন দেশে যখন যান, যা দেখেন, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন সুপারিশ করে থাকেন। যেমন, কোন দেশ কাউন্সিলের ইউপিআর-এর সময় (ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ) দেওয়া সুপারিশ কতটা পালন করল, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা মত দিয়ে থাকেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, করোনার জন্য গত দুই বছরে অনেক সফর হয়নি। এ সব বিবেচনায় হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের আসা একটি রুটিন সফর। তবে সম্ভবত হাইকমিশনার হিসেবে [কোন সদস্য রাষ্ট্রে] এটা তাঁর শেষ সফর। এ ছাড়া জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হতে বাংলাদেশ প্রার্থী হয়েছে। এ সব কারণে তাঁর এই সফর নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। এর বাইরে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অনেক অভিযোগ দেখতে পায়। কিছু অভিযোগের হয়তো ভিত্তি আছে। অনেক অভিযোগের পরে সত্যতা পাওয়া যায় না।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, হাইকমিশনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী এবং এনজিও, সুশীল সমাজ ও শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলবেন। এ ধরনের গঠনমূলক আলোচনা সুস্থ সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় আসতে পারে। তবে সরকারের অবস্থান হচ্ছে, কোনো আইনই নিখুঁত নয়। এ [আইনের প্রয়োগ] নিয়ে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এগুলো তুলে ধরা হবে।

রোববার ঢাকায় পৌঁছার পর মিশেল ব্যাচেলর সেদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর রয়েছে মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ও কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর। ঢাকা ত্যাগের আগে তিনি বসবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশে কেমন আছে, সে প্রসঙ্গও তাঁর আলোচনায় আসতে পারে বলে ঢাকায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে