হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে অপমৃত্যুর তালিকায় আত্মহত্যার পড়েই রয়েছে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা। জন্মলগ্ন থেকে পানির সাথে পরিচয় থাকলেও এই পানিতে সলীল সমাধি হয় শতাধিক মানুষের। চলতি বছরের ১ লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে পুকুর, নদী, হাওরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭০ জনের।

 


পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী ৯৫% ব্যক্তিই শিশু। ফলে এই জেলায় পানিতে ডুবে অপমৃত্যুর তালিকায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা।

 

দেশে বছরে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে, যা এ দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

 

‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এছড়াও  প্রতিদিন পানিতে ডুবে দেশে ৫০ জনের বেশি মৃত্যৃর ঘটনা ঘটছে বলে একটি জড়িপে জানিয়েছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর নামের একটি সংস্থা। তাদের তালিকায় সুনামগঞ্জসহ হাওরের জেলাগুলো সামনের সারিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।

 

জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত ৭ মাসে জেলায় ৭০ জনের প্রাণহানির মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। জেলায় পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়। এই জেলায় ৭ মাসে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এর পরেই রয়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার নাম। এই উপজেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব চেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে শাল্লা ও দিরাই উপজেলায়। ৭ মাসে এই দুই উপজেলায় ১ জন করে মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও সদর উপজেলায় ৬ জন, ছাতক উপজেলায় ৬ জন, তাহিরপুরে ৪ জন, বিশ্বম্ভরপুরে ৩ জন, জামালগঞ্জে ৬ জন, ধর্মপাশায় ৫ জন, মধ্যনগর উপজেলায় ৪ জন এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৩ জন পানিতে ডুবে মারাগেছেন বলে জানিছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, সচেতনতা ও সাঁতারে দক্ষতার অভাব জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে গ্রামীণ এলাকার জলাশয়ের আশপাশে বেড়ে ওঠা শিশুরাও প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকছে। চলতি বছরে পরপর বন্যাও পানিতে ডুবির মৃত্যুর হার বাড়ার কারন হিসেবে দেখছেন তারা। হাওর এলাকায় মৃত্যুর হার কম হলেও সমতল ও পাহাড়ি এলাকায় মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার বিষয়ে শিশুদের সাঁতার না জানা ও তৃণমূল পর্যায়ে অসচেতনতাকেই দায়ি করছেন সচেতনমহল। যার ফলে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রতিটি শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যক্তি, সমাজ ও সরকারকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুল বয়সী শিশুর জন্য শিশুযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ সম্ভব বলে মনে করেন হাওর বিশ্লেষকরা।

 

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, হাওরাঞ্চলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। শিশু মৃত্যু হার বেশি। সাঁতার না জানা ও অচেতনতার কারনে প্রতি বছর শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। বর্ষায় স্কুলে যাওয়ার পথে অনেক শিশু মারা যায়। হাওরের স্কুলগুলোতে শিশুদের নিরাপদ পরিবহণে সরকারিভাবে নৌকা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ চালু করাও জরুরী মনে করেন এই হাওর গবেষক।

 

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, হাওরে পানিতে ডুবে প্রতি বছর অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর প্রধান কারন হাওরে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করার কারনে দুর্যোকালীন সময়ে পানিতে ডুবে শিশুসহ সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নিরাপদ বসতি নিশ্চিত করতে হবে।

 

পাশাপাশি জনসচতেনতা বৃদ্ধি না করলে পানিতে মৃত্যু রোধ সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/শহিদনুর/এসডি-০২