সাবেক কেজিবি বস, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি। বিশ্ববাসীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি চেয়েছেন ইউক্রেনের বিশাল একটি অংশ দখল করতে। দৃশ্যত সে লক্ষ্য পূরণ এখন তার কয়েক ঘন্টার ব্যবধান। সারা বিশ্বের অসীম শক্তিধর নেতাদের সামনে তিনি এই কাজটি করছেন। তার বুক কাঁপছে না। কেন কাঁপবে! তিনি ‘টেস্ট’ হিসেবে এর আগে ক্রাইমিয়াকে দখল করে নিয়েছেন ইউক্রেনের কাছ থেকে। তখনও বিশ্ববাসী পুতিনের কিচ্ছু করতে পারেনি। মূলত সেখান থেকে সাহস সঞ্চয় করেছেন তিনি। দেখেছেন পুরো ইউক্রেনকে দখল করে নিলে ওই প্রতিক্রিয়া একই রকম হবে। সেই সাহসে এবার ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করে তা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার শেষ মুহূর্তে তিনি।

আজই স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কথা। এ সময়ে ভাষণ দেবেন তিনি। এ ঘোষণা আগেই দিয়েছেন তার মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ।
তার আগে তিনি ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার দিন শেষে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি জারি করা হয়েছে। তাতে পুতিন বলেছেন, আমি (ওই অঞ্চলের) সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।


ইউক্রেনের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে আজ তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নিচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দনেৎস্ক ও লুহানস্ক। সব মিলে ইউক্রেনের কাছ থেকে বিশাল অংশ কেড়ে নিচ্ছে রাশিয়া। ক্রাইমিয়াকে দখল করার আট বছর পরে আজ গ্রান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের জর্জিয়েভস্কি হলে আয়োজন করা হয়েছে জমকালো এক অনুষ্ঠান।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই কর্মকাণ্ডে অস্বাভাবিকভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ার এই সম্প্রসারণ জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। এর কোনো আইনগত মূল্য নেই। রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধে বিপজ্জনক এক উস্কানি হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। এ অবস্থাকে অবশ্যই আমি মেনে নিতে পারি না।

এ অবস্থায় আজ শুক্রবার বিশেষ বৈঠকে বসার কথা আছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের। এতে ভেটো দেয়ার অধিকার আছে রাশিয়ার। রাশিয়ার এই সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের ইস্যুতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও আলবেনিয়া। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবার বলেছেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডকে রাশিয়া তার বলে দাবিকে কোনোদিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে না। ইউক্রেনের ওই অঞ্চলগুলোতে কথিত গণভোটকে তিনি মস্কোর কারখানায় তৈরি বলে মন্তব্য করেছেন। ওদিকে ইউক্রেনে উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুতিনকে চাপ দিয়ে ফোন করার কথা রয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানের।

ওদিকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের আজ শুক্রবার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, মৌলিক কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কৌশল হিসেবে। এর আগে রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে তিনি ‘ক্রেমলিনের পাগলাটে শো’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ সময় পশ্চিমাদের উচিত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়া এবং ইউক্রেনের সেনাদের কাছে আরও বেশি অস্ত্র দেয়া।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/ইআ-০৭


সূত্র : মানবজমিন