সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশাপাশি দুটি গ্রাউন্ড। নকশার ছবি।

১৫ জানুয়ারি ২০১৯। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট পর্ব সেদিন মাঠে গড়িয়েছিল। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে মাত্র ৬৮ রানে অলআউট হয়েছিল সিলেট সিক্সার্স!

ম্যাচ শেষে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে হতাশা লুকানোর কোনো চেষ্টাই করেননি সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক অলক কাপালি, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে উইকেটের আচরণ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। একটু সমস্যা হয়েছে। উইকেটে যেভাবে বাঁক নিচ্ছে, মনে হয়েছে তিন দিনের ম্যাচ খেলছি!’


উইকেটের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে সেদিন কথা বলেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক তামিম ইকবালও, ‘যারা খেলছে, তাঁরা বুঝতে পারছে কি হচ্ছে। এটা মোটেও সহজ নয়। আপনি প্রত্যাশা করবেন না প্রথম ওভারেই বল টার্ন করবে। সাধারণত টি-টুয়েন্টি উইকেট ফ্ল্যাট, হাই-স্কোরিং হয়।’

সিলেটের উইকেট নিয়ে এই সমালোচনার রেশ রয়ে গেছে এখনও। চলমান নারী এশিয়া কাপে এখানকার উইকেট দেখে তো রীতিমতো ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ দলের কোচ এ কে এম মাহমুদ ইমন!

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিয়ে এমনিতে কারো কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। এখানকার সুযোগ-সুবিধায় সবাই সন্তুষ্ট। প্রাকৃতিক পরিবেশের সবুজ-শ্যামলিমায় গড়ে ওঠো স্টেডিয়াম মুগ্ধ করে সবাইকে।

কিন্তু উইকেটের (পিচ) কথা এলেই অনেকের কপালে ভাঁজ পড়ে! অভিযোগ, সিলেটের উইকেট বল নিচু হয় বেশি; এখানকার উইকেট মন্থর। সোজা কথায়, এমন উইকেটে ব্যাটিং করা দুরূহ।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এখন গ্রাউন্ড-১ আর গ্রাউন্ড-২ নামে ভিন্ন দুটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। গত ১ অক্টোবর গ্রাউন্ড-২, যেটি মূল গ্রাউন্ডের ঠিক দক্ষিণ পার্শ্বে, সেটি নারী এশিয়া কাপ দিয়ে দেশের নবম আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। তবে এই ভেন্যুর উইকেট নিয়েও আছে অসন্তোষ।

কাল সোমবার এই নতুন ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭০ রান তুলতে সক্ষম হয় নিগার সুলতানার দল!ম্যাচটি ৯ উইকেটে জিতে নেয় পাকিস্তান।

ম্যাচের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা উইকেটেরর সমালোচনা করেন। আর পাকিস্তানের ওপেনার সিদরা আমিন তো কোনো রাখঢাক না করেই বলে দেন, এমন উইকেট মোটেও টি-টোয়েন্টিসুলভ নয়।

উইকেট দেখে ত্যক্ত-বিরক্ত বাংলাদেশ নারী দলের কোচ মাহমুদ ইমনও মুখ বন্ধ রাখতে পারেননি। আজ মঙ্গলবার মুখ খুলেন তিনিও,‘বাংলাদেশের নিজের মাঠে খেলা, সেই সুবিধাটা নিতে চাই না। তবে আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের ভালোর জন্য স্পোর্টিং উইকেটের প্রয়োজন। জিম্বাবুয়ে থেকে শুরু করে যতো জায়গায় দেখেছি, সব জায়গায় মেয়েদের ক্রিকেটে স্পোর্টিং উইকেট থাকে।’

মাহমুদ ইমন সিলেটের ছেলে। নিজের ঘরের মাঠে এমন উইকেট মেনে নিতে পারছেন না তিনি, ‘গতকাল আমরা যে উইকেটে খেলেছি, সিলেট যেহেতু আমার নিজের বাড়ি, আমি বলতে পারি, এখানকার স্থানীয় ক্রিকেটেও আমি এমন উইকেট দেখিনি। আমাদের সামনে এফটিপির (ভবিষ্যৎ সূচি পরিকল্পনা) খেলা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ আছে। আমাদের প্রস্তুতি, মনোবলের ক্ষেত্রে (এমন উইকেট) আমাদের পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’

সিলেটের বাজে উইকেটের বিষয়টি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) কাঠগড়ায়ও ওঠছে। কারণ, এশিয়া কাপের আয়োজক এসিসি।

বাংলাদেশ কোচ বলছিলেন, ‘কালকে আমাদের ম্যানেজার ও আম্পায়ার্স রিপোর্ট দিয়েছে এটা নিয়ে। উইকেট নিয়ে অবশ্যই আমাদের কনসার্ন পার্সনদের (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের) সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিলেটের মাঠে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের আয়োজন করা হয়। তখনও সিলেটের মন্থর, নির্জীব উইকেট নিয়ে সমালোচনা হয়। এই ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল দল ৪৮.৫ ওভারে ১৬৩ রানে অলআউট হয়। এই ছোট লক্ষ্য তাড়ায় জয়ী হয়ে মধ্যাঞ্চল দলকে ৪২.৩ ওভার অবধি খেলতে হয়! ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট যে মোটেও সহজ ছিল না, তা এখান থেকেই পরিষ্কার।

টুর্নামেন্টে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ শেষে মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেছিলেন, ‘ভালো উইকেট না থাকলে ব্যাটার ও বোলার দুজনেরই স্কিলের উন্নতি করা কঠিন। এ ধরনের উইকেট থাকলে স্কিল ভালো করা কঠিন।’

গত আগস্টে মেয়েদের জাতীয় লিগ হয় সিলেটে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হয়েছিল লিগ। তখনও সিলেটের উইকেট ছিল কাঠগড়ায়। ৪৪ আর ৫৭ রানে অলআউট হওয়ার দৃশ্যও তখন দেখা গিয়েছিল।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে