মিরপুর বা সিলেট চিত্রটা প্রায় একই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে উইকেট নিয়ে যতটা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, তা যেনো দল গঠনের আলোচনা-সমালোচনার প্রায় কাছাকাছি। মিরপুরের উইকেট নিয়ে নানা সময় অভিযোগ এসেছে। তবে সেটা করেছেন তারকা ক্রিকেটাররা, টিম ম্যানেজম্যান্টের বাইরের কেউ।

সিলেটের উইকেট নিয়েও একটু-আধটু অভিযোগ আসছিলো ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। তবে টিম ম্যানেজম্যান্ট বা বিসিবির কর্তারা বরাবরই তা এড়িয়ে গেছেন। সমস্যার শিকড় তারা কথা বলতেই চাননি। জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের কোনো কোচকেও উইকেট নিয়ে খুব একটা অভিযোগ করতে শুনা যায় না।



অথচ ক্রিকেটারদের পারফর্ম করা, মনোবল ধরে রাখার মূল কাজটাই করে থাকে উইকেট তথা পিচ। বাংলাদেশের উইকেটে খেললে ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে এমন অভিযোগও করেছিলেন এক ক্রিকেটার। তবে সেটা ছিলো মিরপুরের উইকেট নিয়ে।

সিলেট গ্রাউন্ড দুই একদম নতুন মাঠ। সবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছে। আর শুরুতেই উইকেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের উইকেট নিয়ে। গ্রাউন্ড দুইয়ের ছয় নম্বর উইকেটে হয়েছিলো ম্যাচটি। মাত্র ৩ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ করতে পারে ৭০ রান। পাকিস্তান এক উইকেট হারিয়েই জিতে যায়।

উইকেটের অস্বাভাবিক আচরন হতাশ করেছে সবাইকে। মন্থর আর ঘূর্ণির উইকেট পাড়ার ক্রিকেটেও ‘বিরল’। এমন উইকেট নিয়ে অফিসিয়াল পর্যায়ে আলোচনা হলেই হয়তো আসতে পারে সমাধান। কিন্তুু কর্তারা তা যেনো এড়িয়ে যেতে চান। উইকেট নিয়ে কথা বললেই যেনো বিপদ বাড়ে। অতীতে কোনো কােচ বিসিবির দায়িত্ব থাকা অবস্থায় দেশের কোনো উইকেট নিয়েই তাই প্রকাশ্যে এমন সমালোচনা বা অভিযোগ করেননি।

তবে এই জায়গায় ব্যতিক্রম জাতীয় মহিলা দলের কোচ এ.কে.এম মাহমুদ ইমন। পাকিস্তান ম্যাচের পর দিন তিনি প্রকাশ্যেই উইকেট নিয়ে কথা বললেন। এমন ‘সাহস’ কোচদের মধ্যে দেখা যায় না খুব একটা। বিসিবির দায়িত্বশীল কেউ কথাও বলেন না এসব ইস্যুতে। অথচ উইকেটের উপর নির্ভর করে ক্রিকেটারদের খেলা, পারফর্ম করা।

টাইগ্রেসদের হয়ে তাই যেনো ব্যাটিংয়ে নামলেন কোচ ইমন। জানিয়ে দিলেন, এমন উইকেটে খেললে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যায়। ক্রিকেটাররা পারফর্ম করতে পারে না। এমন উইকেট লোকাল ক্রিকেটেও দেখা যায় না। মেয়েদের উইকেটের উন্নতির জন্য ভালো উইকেটেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নারীদের এশিয়া কাপে মঙ্গলবার প্রেসবক্সে যেনো সংবাদের খরা। গণমাধ্যম কর্মীরা তাই সংবাদের খুঁজেই ছিলেন। বাংলাদেশ দলের কোচ এ.কে.এম মাহমুদ ইমনকে গণমাধ্যমের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো টিম ম্যানেজম্যান্ট। সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি সংবাদকর্মীরা। উইকেট নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকেন কোচের প্রতি। একটা পর্যায়ে মাহমুদ ইমন উইকেট নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। যার কণ্ঠেই যেনো বেরিয়ে এলো ক্রিকেটারদের হতাশার কথা, মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা না বলা কথা।

শুধু গণমাধ্যমে কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি টিম ম্যানেজম্যান্ট। মাহমুদ ইমন জানিয়েছেন, ম্যাচ রিপোর্টে তারা অভিযোগও করেছেন উইকেট নিয়ে। চলমান নারীদের এশিয়া কাপের আয়োজক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বা এসিসি। যদিও আয়োজক এসিসি, তবে তাদের মোড়কে বিসিবিই মূল আয়োজক!

মেয়েদের উন্নতির জন্য স্পোটিং উইকেট প্রয়োজন জানিয়ে মাহমুদ ইমন বলেন, ‘আমি সত্যি কথা যদি বলি, আমি ঘরের দল হিসেবে সুবিধা চাই না। কিন্তুু একটা স্পোটিং উইকেটের প্রয়োজন। আমি সব জয়গায় দেখেছি, যত জায়গায় মেয়েদের ক্রিকেটের খেলা হয়েছে, চেষ্টা করে স্পোটিং উইকেট দেওয়ার।’

মেয়েদের ক্রিকেটকে এরকম উইকেট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট মন্তব্য করে এই কোচ বলেন, ‘এটা যেহেতু আমার নিজের জেলা। আমি লোকাল ক্রিকেটেও এরকম উইকেট দেখিনি। এটা মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য, আমাদের যে এফটিপি ট্যুর আছে, যেকাজগুলো আছে, আমাদের বিশ্বকাপ আছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, আমাদের মনোবল ও প্রস্তুুতর জন্য এটা (উইকেট) পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই, উইকেটের যে আচরণ ছিল এটা ডিসাইডেড (আগেই ফল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার মতো) ম্যাচ ছিল। আপনারা দেখতে পারবেন উইকেটের আচরণটা। তারপরও আমরা তিন বিভাগেই খারাপ খেলেছি।’

উইকেট নিয়ে এসিসির কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে জাতীয় বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘কালকে আমাদের ম্যানেজার ও আম্পায়ার্স রিপোর্ট দিয়েছে এটা নিয়ৈ। উইকেট নিয়ে অবশ্যই আমাদের কনসার্ন পারসনাদের (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

বাংলাদেশের কোচ ইমন বলেন, ‘এটা আপনারা দেখতে পারছেন যে এটা আমাদের জন্য উপকারি না অপকারি। আমরা বাইরে যে ধরণের উইকেট পাব, দেশে তো সেটার প্রস্তুুতি নিতে হবে। যেহেতু এটা এসিসির টুর্নামেন্ট। এসিসির যারা প্রতিনিধি তাদের কাছেই দিয়েছি।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/ইআ-০৭