ফাইল ছবি
ধর্মঘটের কবলে পড়েছে পুরো সিলেট বিভাগ। এর মধ্যে সিলেট জেলায় শনিবার (বিএনপির সমাবেশের দিন) চলবে না কোনো ধরনের যানবাহন। হবিগঞ্জে শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের বাস-মিনি বাস ধর্মঘট। মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জে শুক্র ও শনিবার দুই দিন চলবে না বাস-মিনি বাস।
এসবের মধ্যে সিলেটে শুধু বাস-মিনি বাস ধর্মঘট ডেকেছে জেলার বাস-মিনি বাস মালিক সমিতি। আর এদিন সব ধরনের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শনিবার সিলেটে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘটা পালিত হবে।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। ধর্মঘটের সাথে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্রিল সংযোজন, সিলেটে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা ও নতুন করে অটোরিকশার নিবন্ধন না দেওয়ার দাবিতে চলতি মাসের শুরুতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা৬টা পর্যন্ত তারা পরিবহন ধর্মঘট পালন করবেন। এ সময়ে প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নিলে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শনিবার সব ধরনের পরিবহন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা আসে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া বলেন- ‘আমরা চার দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনের যাবো। দাবিগুলো হচ্ছে- সিলেটের সবগুলো পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান, সিএনজিচালিত নতুন অটোরিকশাগুলোর রেজিস্ট্রেশন প্রদান, সিলেটের লামাকাজী ও শ্যাওলা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ এবং হাইওয়েতে টমটম চলাচল বন্ধ করা।
মৌলভীবাজারে ডাকা হয়েছে দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির এ ধর্মঘটে আগামী ১৮ ও ১৯ নভেম্বর বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেন মৌলভীবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহমদ। তিনিও বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধর্মঘটের কর্মসূচি পালিত হবে।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ সড়কে অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। ফলে সেই দাবিতে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এছাড়া হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কে প্রশাসনিক হয়রানি ও অবৈধ যানবাহন বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে হবিগঞ্জে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ মটরমালিক গ্রুপের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা মোটর-মালিক গ্রুপের সভাপতি ফজলুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কে বাস চলাচলের ক্ষেত্রে নবীগঞ্জ প্রশাসন বাঁধা প্রদান করছে। যানজটের অজুহাতে সরকার নির্ধারিত স্থান ছালামতপুরে বাস নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এছাড়া সড়কে অবৈধ যানবাহনের কারণেও বাসগুলো বিভিন্নভাবে হয়রাণির শিকার হচ্ছে। তাই আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে জেলা মটরমালিক গ্রুপের আওতাধিন সকল বাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’
পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দুইদিন আগ থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিনদিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিক পক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডেকেছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র।
আগামী শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেটে বিএনপি গণসমাবেশ করবে। এ সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত রয়েছেন। সিলেট বিভাগজুড়ে ডাকা ধর্মঘট তাদের সমাবেশে কোনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না বলে দাবি বিএনপির।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নেতাকর্মীরা গণসমাবেশে অংশ নেবেন এবং সকল বাধা উপেক্ষা করে ১৯ নভেম্বরের গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামবে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম