অবশেষে নিম্নমুখী ধারা থেকে বের হতে পেরেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে কিছুটা বেড়েছে। নভেম্বর মাসে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

 


রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর রেমিট্যান্স প্রবাহ ওঠানামা করলেও গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স আগের ৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এসেছিল। গত অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। তবে চলতি নভেম্বর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৭ হাজার ৬৩ কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে)। ২০২১ সালের নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নভেম্বরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে—তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২৮ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। বিগত সময়ের মতো এবারও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। নভেম্বরে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এরপরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ১ লাখ ডলার, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ  মার্কিন ডলার, আগস্টে এসেছে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং নভেম্বর এসেছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার।

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার।  এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

 

এদিকে রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রবাসীদের উদ্দেশে জানানো হয়—বৈধপথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন। হুন্ডি বা অন্য কোনও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর জন্য এভাবে আহ্বান জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনও অবৈধ পথে) পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

২০২১ সালে তুলনায় এ বছর প্রবাসী আয় ১ বিলিয়ন ডলার কমতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় ২১ বিলিয়ন ডলার আসতে পারে, যা গত বছর ছিল ২২ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, শীর্ষ ৮ প্রবাসী আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে থাকবে। গত বছরও বাংলাদেশ একই অবস্থানে ছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর প্রথম অবস্থানে থাকবে ভারত। দেশটিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় আসবে।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত-০১


সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন