সরকারি ঘর বিক্রির দলিল।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে কয়েক ধাপে গৃহ ও ভূমিহীনদের মধ্যে সরকারি জায়গায় সরকারি অর্থায়নে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। এতে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতায় ভাসেন শেখ হাসিনা। 

সারা দেশের ন্যায় সিলেটের জৈন্তাপুরেও এভাবে ঘর পান গৃহহীন ও ভূমিহীনরা। তবে এ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রকৃত উপকারভোগীদের না দেওয়া এবং পরবর্তীতে এসব ঘর লাখ টাকায় বিক্রিরও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। 


জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘর বরাদ্দের শুরু থেকেই জৈন্তাপুরে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বাড়ি-ঘর রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন এবং তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ফারুক হোসেন সরকারি ঘর বরাদ্দ দেন। যার ফলে সরকারি ঘর প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন প্রকৃত ভূমি ও ঘরহীনরা। এমনই একজন উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের দৃষ্টিহীন জসিম আহমদ। তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে একচালা আট-দশ হাতের একটি ঘরে থাকেন। সরকারি ঘর দেওয়া হচ্ছে জানতে পেরে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার বরাবরে আবেদন করেও ঘর পাননি। 

অভিযোগ রয়েছে- যারা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তারা বেশিরভাগই তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের পিয়ন ও পিয়নের নিকটাত্মীয়। তারা বিভিন্ন নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে পরবর্তীতে সেগুলো বিক্রি করে দেন। 

এভাবেই সরকারি ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে শিরিন আক্তার নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার ১নং নিজপাট ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি মৌজার অন্তর্ভুক্ত বিএস খতিয়ান নং-১, নামাজির খতিয়ান নং-৩০৬ ও বিএস দাগ নং-৪০২ এর দুই শতক ভূমির উপরে নির্মিত মুজিববর্ষের সরকারি ঘর গত বছরের ১৯ জুন বুঝে পান। কিন্তু ঘর পাওয়ার পর সেই সরকারি ভূমি ও ঘরকে তিনি নিজের উল্লেখ করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাজুল ইসলাম মনু নামের স্থানীয় একজনের কাছে আনরেজিস্ট্রার্ড দলিল করে বিক্রি করে দেন। 

সেই দলিলে শিরিন আক্তার উল্লেখ করেন- বর্ণিত ভূমিতে মাটি কাটা ও গর্ত ভরাট এবং জঙ্গল আবাদ করে গৃহ নির্মাণ বাবদ ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সেই খরচের ভিত্তিতে তিনি ঘরের দাম ১ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও তিনি দলিলে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এই জমির মালিক বলে দাবি করেন। 

এই দলিলে স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছেন নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের এক সাধারণ সদস্য। তিনি সাবেক যুবলীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য।  

ওই ঘরের ক্রেতা তাজুল ইসলাম মনু এবং তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, কয়েকদিন ঘরে বসবাস করে জানতে পারি এটি সরকারি মুজিব বর্ষের ঘর। বিষয়টি জানতে পেরে মুজিববর্ষের ঘর বিক্রেতা শিরিন আক্তারের কাছে গিয়ে ঘর ফেরত নিয়ে টাকা দিতে বলি।  কিন্তু শিরিন আক্তার টাকা ফিরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বিষয়টি এলাকার বিশিষ্টজনসহ মুরুব্বিদের জানাই।

এ প্রসঙ্গে জানতে সরকারি ঘর বিক্রেতা শিরিন আক্তারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার তথ্য পেয়ে সরজমিন তদন্তের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। ঘর শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুজিবনগরের অন্যান্য ঘরের বাসিন্দাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। ঘর বিক্রয়ের সাথে যারা জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / সাব্বির / ডালিম