সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে সড়ক পথে মোট ৬ হাজার ৭৪৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৫১ জন। সেই হিসেবে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ২৮ জন। একই বছর সড়ক, রেল, নৌ-পথে সর্বমোট ৭ হাজার ৬১৭টি সম্মিলিত দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। 

 


২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোমবার (২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে জানান, বিদায়ী বছরে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত ও ৩১৮ জন আহত হওয়ার পাশাপাশি ৭৪৩জন নিখোঁজ হয়েছেন। 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের ১৫ জুলাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর, ওইদিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন ২৯ জুলাই, ওই দিন ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ১১ জুলাই, ওইদিন ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১২৪ জন আহত হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ৮ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও ত্রি-হুইলার সরকারি আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে বিগত ৮ বছরের মধ্যে বিদায়ী ২০২২ সালে সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে।

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে— বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক প্রমুখ।

 

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত-০২


সূত্র : প্রতিদিনের বংলাদেশ