সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারে অনুমোদন না থাকার সত্তেও অবৈধভাবে মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। কোনো ধরণের নিবন্ধন ছাড়াই গত কয়েক মাস ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নজরে আসেনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। 

 


এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তোয়াকুল ইউনিয়নের পাইকরাজ গ্রামের আজির উদ্দিনের ছেলে গিয়াস উদ্দিন বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেম অব মেডিসিন বিষয়ে চিকিৎসক হিসেবে এ ক্যাটাগরীতে  নিবন্ধনের একটি সনদ পত্র ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর গ্রহন করেন। এই সনদ পত্রটিকে এমবিবিএস ডাক্তারের সার্টিফিকেট হিসেবে এলাকায় প্রচার করে মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। 

এছাড়া তার আপন বোন ছালেহা বেগম (যিনি বিভিন্ন ক্লিনিকে আয়া) হিসেবে কাজ করেছেন তিনি রয়েছেন এই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট হিসেবে। ভাই ও বোন মিলে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য। ফলে এ প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। 

 

মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স না থাকলেও, তেমন কোনো ঝামেলা প্রতিষ্ঠানের মালিকের পোহাতে হয়নি। সূত্র জানায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার জন্য লাইসেন্স করতে হলে পরিবেশগত ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন হয়। কিন্তু পরিদর্শন কালে এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি কপিও দেখাতে দিতে পারেনি কতৃপক্ষ। পরিদর্শনের সময় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিগ্রীধারী এমবিবিএস চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে হাকিম গিয়াস উদ্দিন ও আয়া ছালেহা রমরমা ব্যবসা করছে। এতে প্রতিনিয়ত সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন  গ্রামের সাধারণ ভুক্তভোগী রোগীরা। 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের নিবন্ধন নিতে গেলে একজন ডিগ্রীধারী এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট দেখাতে হয়। কিন্তু হাকিম গিয়াস উদ্দিন এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছেন এবং ঐ প্রেসক্রিপশনের লেখা ঔষধ খেয়ে রোগীদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। এমনকি দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’র অধীনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হয়। এই আইন অনুযায়ী, মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক স্টেন্টারের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। যা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

এলাকার সচেতন মহল জানান, চিকিৎসার নামে অবৈধ মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক অনিয়ম করছে, তার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরেরও দায়বদ্ধ হতে হবে। উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত খেলছে। এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত রোগীরা আর্থিকভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভুল প্রেসক্রাইব করছেন। 

 

এ ব্যাপারে মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, তোয়াকুল বাজারে মানব সেবার উদ্দেশ্যেই মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্টা করা হচ্ছে। তার উপর আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, এখনো পর্যন্ত ক্লিনিকের অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। এ প্রতিষ্টানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে। মায়ের হাসি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি উদ্বোধন হতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে। পাশাপাশি লাইসেন্স এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে সরকারের নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছেন সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজাদী প্রাপ্তী সাপেক্ষে এই প্রতিষ্টানটি উদ্বোধন করা হবে।
 
সঠিকভাবে নিবন্ধন ও সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উদ্যোগের ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কোন নতুন ক্লিনিক নিবন্ধন পাবেনা। অবৈধ হাসপাতাল ও অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনাকে কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে এবং এ ধারা চলমান থাকবে।

 

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/মতিন/নাজাত-০৬