সৌদি আরবে দালাল চক্রের নির্মাম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ছেলে। অনেক আশা নিয়ে বিদেশে পাঠানো ছেলের কষ্ঠ দেশে থাকা বৃদ্ধা মাকে দিনরাত কাদিয়েই চলছে। ছেলে আয়-রোজগার করে অসহায় পরিবারের হাল ধরবে, এমন আশায় দালাল চক্রের মিষ্টি কথায় মুগ্ধ হয়ে নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করে বড় ছেলে রুবেল আহমদ (২৪)’কে সৌদি আরবে পাঠিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা মা আফিয়া বেগম।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মৃত মছরব আলীর পুত্র রুবেল আহমদ বিদেশে দালাল চক্র কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ব্যাপার রুবেলের মা আফিয়া বেগম গ্রাম্য সালিশে বিচার চেয়েও সুষ্ঠ বিচার পাননি। অবশেষে বিচার চাইতে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন থানা পুলিশের। পুলিশও সেভাবে বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে অভাগা মায়ের কান্না কেউ না শুনলেও বহাল তবিয়তে থেকে নিজের দল বড় করেই চলছে রুবেলকে বিদেশে পাঠানো প্রভাবশালী দালাল গৌছ আলী (৩৫)। সে রুবেলদের পাশের গ্রাম আজিজ নগরের মৃত কলমধর আলীর পুত্র।
এলাকাবাসী, পারিবারিক ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক মাস পূর্বে রুবেলের বাড়িতে দালাল চক্র ‘মাত্র ৪ লাখ টাকায় সৌদিতে দেড় হাজার রিয়ালের চাকুরী, সাথে থাকা ফ্রি’ এমন লোভনীয় অফার নিয়ে আসে তাদের বাড়িতে। এমন লোভে পড়ে দিনমজুর রুবেলকে বিদেশ পাঠাতে রাজি হন তার মা আফিয়া বেগম। ঘরের সবকটি গরু কমদামে বিক্রি করে ২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন।
দিনমজুরের কাজ করা রুবেলের ‘বড় বোন ও বোনের স্বামীর’ কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ হিসেবে নেন। তারপর একটি এনজিও থেকে আরো ৫০ হাজার লোন তুলে সব মিলিয়ে ৪ লাখ সংগ্রহ করে তিন কিস্তিতে প্রতিবেশীদের সামনে রেখে দালাল গৌছ আলীকে টাকা দেন রুবেলের মা আফিয়া। এসময় গৌছ আলীও আশ্বাস দিয়ে বলেন চিন্তা করবেন না, রুবেলের সব দায়-দায়িত্ব আমার। অবশেষে ২০২১ সালের ৬ আগষ্ট সৌদিতে যায় রুবেল। সিলেট থেকে ফ্লাইটের কথা থাকলেও ফ্লাইট হয় ঢাকা থেকে। সেখানে পৌঁছার পর থেকেই শুরু হয় রুবেলের দূর্দশার দিন। সেখানে পৌছার ৫ ঘন্টা অপেক্ষার পর রুবেলকে রিসিভ করে এক ইন্ডিয়ান ব্যক্তি। যাওয়ার পরের দিন কাজ শুরুর কথা থাকলেও কয়েকদিন সামান্য খাবার দিয়ে ঘরের ভিতর আটকে রাখা হয় তাদের কয়েক জনকে।
সেখানে যাওয়ার কিছু দিন পর তারা আকামা, পাসপোর্ট চাইলে দালাল চক্রের লোকজন তাদেরকে মারধর করে। আর বলে কাজ করতে হলে আরও দুই লাখ টাকা দিতে হবে। এভাবে কয়েক মাস চলে যায়। খাবার দেয়াও বন্ধ করে দেয়। পরে সে বাড়িতে খাবারের টাকা চাইলে সুদ করে মা টাকা আরো ২৫ হাজার টাকা বিদেশে পাঠান। পরে সেখান থেকে পালিয়ে এখন এক বাঙালির কলনীতে আশ্রয় নেয় নির্যাতনের শিকার হওয়া রুবেল।
এদিকে, মাকে পাঠানো ছেলের ভিডিওতে ছেলের কান্নাকাটি মোবাইলে দেখে প্রতিদিন দালাল গৌঁছের বাড়িতে যান মা আফিয়া বেগম। প্রতিদিনই সে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিতে থাকে। পরে এলাকার মুরব্বীদের স্বরনাপন্ন হলে একাধিকবার সালিশও বসে। কিন্তু দালাল প্রভাবশালী হওয়ায় কারও কথা শুনেনা। পরে বিচার চেয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি)’র বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন রুবেলের মাআফিয়া বেগম।
এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার বিশ্বনাথ থানায় ফোন করে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনা দেন। থানায় অভিযোগ দিলে এর তদন্তের দায়িত্ব পান বিশ্বনাথ থানার এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে, পুলিশের কাছ থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন রুবেলের পরিবার। কোথাও বিচার না পাওয়া রুবেলের মা কান্নাকাটি করে তার ছেলেকে ও দালালের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার এবং সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে গৌছ আলী জানান, রুবেলকে আমি বিদেশে পাঠাইনি। আমতৈলের নূরুল হকের মাধ্যমে রুবেল বিদেশে গেছে। শুধু মধ্যস্থায় ও টাকা লেনদেনের সময় ছিলাম উপস্থিত ছিলেনগৌছ।
অসহায় এই মহিলার পুত্রের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে জানিয়ে বিশ্বনাথ থানার এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন। দুই পক্ষকেই কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / প্রনঞ্জয় / ডি.আর