সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় দিনভর বেলুন বিক্রি করে শতাধিক শিশু-কিশোর। বেলুন বিক্রির আড়ালে এসব শিশু-কিশোর জড়াচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও। এদেরকে দিয়ে এসব কাজ করায় কতিপয় অসাধু নারী-পুরুষ।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সিলেটের শীর্ষ পাঠকপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ‘সিলেটভিউ২৪’-এ ‘সিলেটের রাস্তায় কোমলমতিরা, বেলুনের আড়ালে ক্রাইম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে পড়লে সমাজসেবা অধিদফতরের সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তৎপর হন। তারা এসব শিশু-কিশোরকে ‘সুপথে’ ফেরাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
সমাজসেবা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের নির্দেশে বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেটভিউ কার্যালয়ে আসেন দুই কর্মকর্তা। তারা হলেন- সিএসপিবি প্রকল্পের আওতাধীন বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজকর্মী মো. তারেক আহমদ ও শহর (সিলেট) সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজকর্মী আশিষ কুমার দাস।
তারা জানান, শীঘ্রই সিলেটের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এসব শিশু-কিশোরের তালিকা করা হবে এবং কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তাদের ‘সুপথে’ ফেরানোর চেষ্টা করা হবে। সরকারি তত্বাবধানে তারা সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাবে।
এ কাজের ক্ষেত্রে তারা গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
এর আগে সিলেটভিউয়ে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়- সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা ও বারুতখানা এলাকায় শিশু-কিশোর বয়সের শতাধিক ছেলে-মেয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বেলুন বিক্রি করে। বেলুন বিক্রি করতে গিয়ে অনেক সময় তারা পড়ে প্রচন্ড ঝুঁকিতে। চলমান গাড়ির পাশাপাশি দৌঁড়াতে গিয়ে থেকে যায় দুর্ঘটনার ভয়। যে বয়সে তাদের পড়ালেখা করার কথা, সে বয়সেই পড়তে হয়েছে কঠিন এ পরিস্থিতিতে।
তবে এই বেলুন বিক্রির আড়ালে রয়েছে ভয়ংকর এক ‘ক্রাইম’র গল্প। সিলেটে কয়েকটি চক্র বা গ্রুপ এসব শিশু-কিশোরকে বাধ্য করে বেলুন বিক্রি করতে। বেলুন বিক্রির টাকার বড় অংশ চলে যায় এসব গ্রুপের লিডারের হাতে। এমন একটি গ্রপের ‘লেডি লিডার’ চুমকি নামের এক তরুণী। চৌহাট্টা এলাকায় তার বিচরণ। তার অধিনস্থরা বলছে- চুমকির সঙ্গে ধারালো ব্লেড ও ছুরি থাকে। বেলুন বিক্রির পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের চুরি ও ছিনতাই কাজেও ব্যবহার করে সে। ব্যবহার করে মাদক বিক্রির কাজেও। মাদক বিক্রির ফাঁদে পড়ে একসময় এসব শিশু-কিশোরও হয়ে পড়ে মাদকসেবী। তারা প্রায় সবাই-ই ড্যান্ডি নামক মাদক সেবন করে। এসব তারা করে প্রকাশ্যেই, বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সামনে।
বেলুন বিক্রিকারী এসব শিশু-কিশোরের এলাকা ভাগ করা থাকে। এক এলাকার দল আরেক এলাকায় বেলুন বিক্রি করতে পারে না। অন্যের এলাকায় ঢুকে পড়লে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এলাকাভিত্তিক একেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় একেকজন। ১৫-১৬ বছর বয়েসি কিশোরীদের দিয়ে সে অনৈতিক কাজও করানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, কিছু শিশু-কিশোরের মা-বাবা নিজেরা কোনো কাজকর্ম না করে সন্তানদের সিলেটে বেলুন বিক্রিতে জড়িয়ে পরিবারের আয়ের উৎস বানিয়েছেন।
এসব শিশু-কিশোরের সবাই আবার ছিন্নমূল নয়, অনেকেরই বাবা-মা আছেন। তারা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার কলোনিতে বাস করেন।
এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম সিলেটভিউ-কে বলেন- সিলেটের এমন শিশু-কিশোরদের বিষয়ে সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবু বিষয়টি যেহেতু অবগত হলাম, সেহেতু তাদের নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন- চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) প্রকল্পের আওতায় আমাদের কিছু সমাজকর্মী রয়েছেন, তাদের মাধ্যমে এসব শিশু-কিশোরকে কাউন্সিলিং করে সুপথে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম