ছবি : রুবেল মিয়া
মো. আমজদ আলী তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে ৪৮ বছর আগে ঘর ছেড়েছিলেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান ভারতে। ওই সময় রেখে গিয়েছিলেন ৬ মাস বয়সের ছেলে কালা মিয়াকে। সেই কালা মিয়াকে আট বছর বয়সে ফেলে তার মা-ও চলে যান পাকিস্তান।
জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত কাটিয়ে একে একে দীর্ঘ ৪৮টি বছর পার করেছেন কালা মিয়া। এ দীর্ঘদিনে একবারের জন্য দেখতে পাননি বাবা আমজদ আলীকে, কারণ আর বাড়িতে ফেরেননি। তবে ৪৮ বছর পর হঠাৎ ছেলের সন্ধানে দেশে ফিরলেন শত বছর বয়সী আমজাদ। খুঁজে বের করলেন ছেলেকে। এত বছর পর হারানো বাবাকে ফিরে পেয়ে কালা মিয়ার পরিবারে বইছে খুশির বন্যা।
বর্তমানে সিলেট মহানগরের মদীনা মার্কেটের বাসিন্দা কালা মিয়া জানান, তাদের মূল বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানায়। তার মা হাজেরা খাতুনের বাবার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার বারাড্ডা থানায়। প্রায় ৪৮ বছর আগে তার মা হাজেরা খাতুনের সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া হয় তার বাবার। ঝগড়ার পর ছেলে ও স্ত্রীকে রেখে আমজদ আলী চলে যান ভারতে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৬ মাস। ভারতে গিয়ে তিনি আবারো বিয়ে করেন এবং সেখানে তার চার সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি ভারতের নাগরিক। বাবা ছেড়ে যাওয়ার আট বছরের মাথায় তার মা হাজেরা খাতুনও তাকে ছেড়ে চলে যান পাকিস্তানের করাচিতে। সেখনে তিনি স্থানীয় একজনকে বিয়ে করেন এবং সেখানে তার পাঁচ সন্তান রয়েছে।
বাবা-মাহীন ৮ বছর বয়স থেকে শুরু হয় কালা মিয়ার জীবনযুদ্ধ। জীবিকার তাগিদে ময়মনসিংহ থেকে চলে আসেন সিলেট। টুকি- টাকি ব্যবসা শুরু করেন। সিলেটেই বড় হয়ে উঠেন তিনি। একসময়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি চার সন্তানের জনক। সিলেটে থাকছেন ৩৫ বছর ধরে।
কালা মিয়া জানান, গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে ময়মনসিংহ থেকে একজন মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান- কালা মিয়ার খুঁজে তার বাবা দেশে এসেছেন। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত চলে যান সেখানে এবং বাবাকে নিয়ে ফেরেন সিলেটে। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর জন্মদাতা বাবাকে চোখের সামনে দেখে কালা মিয়ার চোখ দিয়ে গড়ায় আনন্দাশ্রু। মিলনমুহুর্তে বাবা-ছেলে দু’জনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন অনেক্ষণ।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে কালা মিয়া সিলেটভিউ-কে বলেন, এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। কারণ দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে আমি আমার বাবাকে পেয়েছি। আমার সন্তানেরা পেয়েছে তাদের দাদাকে। তাই পরিবারের সবাই খুব খুশি। আমার বিশ্বাস ছিলো- বাবা একদিন ফিরে আসবেন। আমি বাবাকে খুঁজে পেয়েছি, এটিই আমার কাছে বড় আনন্দের। এখন সবাইকে নিয়েই আমি সুখে থাকতে চাই। বাবা যেভাবে ফিরে এসেছেন আশা করি আমার মাও ফিরে আসবেন।
এ ক্ষেত্রে সরকারে সাহায্য কামনা করেন কালা মিয়া।
আমজদ আলী ফিরে আসায় আনন্দিত কালা মিয়ার পরিবারও। কালা মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া সিলেটভিউ-কে বলেন, দাদাকে পেয়ে অনেক খুশি। ছোটবেলা থেকে দাদা-দাদির কাউকেই দেখিনি। মনে আশা ছিলো- তাদেরকে একদিন ফিরে পাবো। আজ আমাদের সবার আশা পূরণ হয়েছে।
কালা মিয়ার স্ত্রী সিলেটভিউ-কে বলেন, আমরার শ্বশুরকে সেভাবে ফিরে পেয়েছি ঠিক সেভাবে শ্বাশুড়িকেও ফিরে পেতে চাই।
মো. আমজদ আলী জানান, সেসময় স্ত্রীর সাথে অভিমান করে ভারতে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেকে কখনোই ভুলতে পারেননি। তাই এত বছর পরও ছেলেকে খুঁজতে দেশে চলে এসেছেন। তিনি আনন্দে কী বলবেন তা বুঝতে পারছেন না। তবে তিনি যে ভীষণ খুশি হয়েছেন- এটাই শুধু বলতে পারছেন।
এদিকে, এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। আশ-পাশ এলাকার লোকজন ৪৮ বছর পর ফেরা মো. আমজদ আলীকে দেখতে তার ছেলের মদিনা মার্কেটের বাসায় ভিড় জমাচ্ছেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত / ডালিম