সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেছেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা। বিশাল জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলায় দিন দিন বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে, যা পরিবেশের জন্যে খুবই উদ্বেগজনক। দেশের অধিকাংশ উপজেলার মতো গোয়াইনঘাটেও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা অনুন্নত।

 


আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট খোলা স্থানে বর্জ্যগুলো স্তুপ করা (ময়লার ভাগাড়) বুঝে থাকি; কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এটি কোনো সমাধান নয়। এভাবে বর্জ্য খোলা স্থানে ফেললে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, বিভিন্ন প্রকারের রোগবাহী জীবাণু ও কীটপতঙ্গের উৎপত্তি ঘটে।

 

তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ল্যান্ডফিল বা ময়লার ভাগাড়ে বর্জ্যরে পরিমাণ কমাতে এগুলো সরাসরি পোড়ানো হয়। এতে প্রচুর গ্রিন হাউজ গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি) নিঃসরিত হয়। এ ছাড়াও ল্যান্ডফিলে বর্জ্য পচে গিয়ে যে তরল নির্গত হয় তা ভূ-গর্ভের পানির সাথে মিশে পানি দূষিত করে। অর্থাৎ আমাদের বর্তমান বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ল্যান্ডফিল অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের কারণে দিন দিন পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য যে ধাপ রয়েছে সেগুলোও  ঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।

 

তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর আরো বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই এ ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

তিনি বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সী (জাইকা)'র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত  বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যে সব পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও আদেশ রয়েছে সেগুলো হলো- ১. বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, ২. বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০০ (সংশোধিত), ৩. বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০২ (সংশোধিত), ৪. বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১২ (সংশোধিত), ৫. পরিবেশ আদালত আইন-২০০০, ৬. পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭, ৭. পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ (সংশোধিত ফেব্রুয়ারি), ৮. পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ (সংশোধিত আগস্ট), ৯. পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০৫), ১০. পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ (সংশোধিত ২০১০)। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেসব বিধিমালা ও আদেশ রয়েছে সেগুলো হলো- ১. চিকিৎসাবর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা-২০০৮, ২. বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১১, ৩. ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৭ (খসড়া)।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান আরো বলেন, নাগরিক সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে দৈনিক একটি পরিবারে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার মাঝে পচনশীল বর্জ্য ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা ব্যাগে বা ময়লার ঝুড়িতে সংরক্ষণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যত কাণ্ডারী। তাই এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই শিশুদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। এ শিক্ষা দিতে হবে পরিবার থেকেই। ছোট থেকেই ময়লা-আবর্জনা যথাযথ স্থানে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গণমাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে নিয়ে প্রচারের মাধ্যমে শিশুসহ আমাদের সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।

উন্নত দেশগুলোতে বর্জ্যকে সম্পদের সাথে তুলনা করা হয়। আমাদের দেশেও পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্জ্যই সম্পদ হয়ে উঠবে। সব দিক বিবেচনা করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে দূষণমুক্ত, নিরাপদ ও সুস্থ-সুন্দর পরিবেশের গোয়াইনঘাট উপজেলায় নির্মাণ অসম্ভব নয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার শুভ উদ্বোধন করেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ।

 

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন উপজেলার বিভিন্ন স্তরের জন প্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/মতিন/এসডি-২৯