চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এ এইচ এম আহসানুল হক। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে তিনি আইন পেশার চর্চা করেন। পেশায় আইনজীবী হলেও আহসানুল হক ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার লাগিয়ে ঘোরাফেরা করেন। এক বছর ধরে তিনি এই স্টিকার ব্যবহার করছেন বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চট্টগ্রামের আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিবিআই সরকারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা। দেশের সব চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্ত করে তারা। তাদের লোগোযুক্ত স্টিকার অন্য কেউ ব্যবহার করা বা করার সুযোগ দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। এছাড়া সংস্থাটির সদস্য নন এমন কেউ পিবিআইয়ের স্টিকার পেলেন কীভাবে তাও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার।


আমি পিবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা। বাবুল আক্তারের মামলা পরিচালনা করি। সিকিউরিটি সমস্যা আছে, এজন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে। এছাড়া পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য আমাকে ফোর্সের সদস্যও দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, আদালত চত্বরে রাখা হয়েছে আইনজীবী আহসানুল হকের লাল রঙের টয়োটা পাসো সিরিজের গাড়িটি (চট্ট মেট্রো খ : ১১-১৫১৬)। গাড়িটির সামনের গ্লাসে লাগানো হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার। এর পাশে আছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একটি স্টিকার। পেছনের গ্লাসে রয়েছে শুধু পিবিআইয়ের স্টিকার। প্রথম দেখায় যে কেউ মনে করতে পারেন গাড়িটি হয়তো পিবিআইয়েরই কোনো কর্মকর্তার!


বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাল রঙের এই পাসো গাড়িটি আইনজীবী আহসানুল হকের নামেই নিবন্ধিত।

আদালত চত্বরে কয়েকজন আইনজীবী ঢাকা পোস্টকে জানান, লাল রঙের গাড়িটি প্রায়ই এখানে দেখা যায়। গাড়িটিতে চলাফেরা করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের নিয়োগ করা আইনজীবী ছিলেন আহসানুল হক। এ মামলা পরিচালনা করার সুবাদে তার সঙ্গে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে তিনি কোনো এক কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজের গাড়িতে পিবিআইয়ের স্টিকার লাগিয়ে নেন।

আহসানুল হক চট্টগ্রামের পরিচিত আইনজীবী। তিনি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেন। আইনজীবী হিসেবেই তিনি সুপরিচিত। তার গাড়িতে আইনজীবীর স্টিকার লাগালেই যথেষ্ট। এর বাইরে গিয়ে তিনি কেন পিবিআইয়ের স্টিকার লাগিয়েছেন সেটি কারও বোধগম্য নয়। বিষয়টা আইনজীবীদের জন্য বরং বিব্রতকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনজীবী এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী এ এইচ এম আহসানুল হক বলেন, ‘আমি পিবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা। বাবুল আক্তারের মামলা পরিচালনা করি। সিকিউরিটি সমস্যা আছে, এজন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে। এছাড়া পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য আমাকে ফোর্সের সদস্যও দেওয়া হয়।’

তবে পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগ ও মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মজিদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশের কোথাও পিবিআইয়ের নিজস্ব কোনো আইনজীবী নেই। আমরা মাঝেমধ্যে মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের পরামর্শ নিই। ওই আইনজীবী কেন পিবিআইয়ের লোগো সম্বলিত স্টিকার লাগিয়েছেন তা আমি জানি না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখব। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের কয়েকজন আইনজীবী বলেন, আহসানুল হক চট্টগ্রামের পরিচিত আইনজীবী। তিনি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেন। আইনজীবী হিসেবেই তিনি সুপরিচিত। তার গাড়িতে আইনজীবীর স্টিকার লাগালেই যথেষ্ট। এর বাইরে গিয়ে তিনি কেন পিবিআইয়ের স্টিকার লাগিয়েছেন সেটি কারও বোধগম্য নয়। বিষয়টা আইনজীবীদের জন্য বরং বিব্রতকর।

শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশের কোথাও পিবিআইয়ের নিজস্ব কোনো আইনজীবী নেই। আমরা মাঝেমধ্যে মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের পরামর্শ নিই। ওই আইনজীবী কেন পিবিআইয়ের লোগো সম্বলিত স্টিকার লাগিয়েছেন তা আমি জানি না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখব।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘পিবিআইয়ের নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী না হলে তিনি কীভাবে স্টিকারটি লাগালেন? বিষয়টি তো পুরোটাই বেআইনি। এ ধরনের স্টিকার লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। পিবিআইয়ের উচিত ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/ইআ-১০