খাদিমুল কুরআন পরিষদের ৩ দিনব্যাপী তাফসীর মাহফিলে শেষ দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওলাদে রাসুল সায়্যিদ আসজাদ মাদানী বলেন, মুসলমান আজ সংখ্যার দিক দিয়ে অধিক হলেও শক্তির মানদন্ড মুসলমারা অত্যন্ত দুর্বল। তার কারণ একটাই যে মুসলমানরা আজ কুরআন বিমূখতা। শান্তির সমাজ গড়তে হলে কুরআনের দাওয়াত সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশ্বনবী (সাঃ) জাহিলিয়াতের অন্ধকারকে কুরআন দিয়েই আলোকিত করেছিলেন। বর্তমানে মানুষ পার্থিক জীবনের সুখ-শান্তির জন্য অনন্তকালের সফলতাকে ভুলে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কুরআনের শিক্ষা ও আল্লাহ ভীতির মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। তবে আমরা ইহ ও পরকালী মুক্তিলাভ করতে পারবে। 


আওলাদে রাসুল সায়্যিদ আসজাদ মাদানী ৩ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার খাদিমুল কুরআন পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে নগরীর ঐতিহাসিক সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে তিনদিন ব্যাপী ২৭তম তাফসিরুল কুরআন মহাসম্মেলনে সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি বয়নে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।



বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিন এর ইমাম ও খতীব শায়খ আলি উমর ইয়াকুব আল আব্বাসী বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এর বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন নবী সা ও সাহাবায়ে কেরাম। পৃথিবীর কোনায় কোনায় ইসলামের দাওয়াত পৌছায়ে ছিলেন। বিশ্বনবী (সাঃ) শেষ নবী। এ দুনিয়ায় আর কোন নবী আসবেন না। তাই কুরআন-হাদীসের বাণী সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া উলামা-কেরামের গুরু দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আদায় করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার সর্বত্র ঘটাতে সবাইতে কাজ করার আহবান জানান।


তাফসির মাহফিলের বিভিন্ন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, খাদিমুল কোরআন পরিষদ সিলেটের সভাপতি ও জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানিগঞ্জী। মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে দেশে বরেণ্য উলামায়ে কেরাম সহ স্থানীয় আলীমগণ তাফসির পেশ করেন।
হাফিজ মিশকাত হাবীব সামির তেলাওতে সূচীত তাফসীর মাহফিল শেষান্তে এবারের ৭দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন মাওলানা আবুল খায়ের বিথঙ্গলী। প্রস্তাবনা সমূহ হচ্ছে- ২০২৩ সালে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহে বিবর্তনবাদ সহ অসংখ্য ভুলভ্রান্তির সাথে সাথে ইসলামী মূল্যবোধ বিলুপ্তিকরণ ও বিজাতীয় অন্ধ অনুকরণে ভরপুর হওয়ায় এ সকল পাঠ্যপুস্তক অনতিবিলম্বে বাতিল করতঃ এর স্থলে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য পাঠ্য তালিকা প্রণয়ন কমিটিতে বিজ্ঞ ও হক্কানী উলামায়ে কেরামদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় এনে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ।


স্কুল-কলেজের সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রী মুসলমান হওয়ার কারণে পাঠ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় ইসলামী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা, কুরআন, রাসূলুল্লাহ সা. ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আইন জাতীয় সংসদে পাশ করতে হবে।


বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের মত বাংলাদেশেও কাদিয়ানীদেরকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। বাউল গান ও মারিফতের নামে আল্লাহ, রাসূল ও কুরআন নিয়ে ভন্ডামী বন্ধে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করতে হবে ।


হিযবুত তাওহীদ, লা-মাযহাবী, সাদপন্থীসহ সকল বাতিল ফেরকার অপতৎপরতা কঠোরহস্তে বন্ধ করতে হবে । মায়ানমার, চীন, কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের সকলদেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কুটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।


তিনি উপরোক্ত প্রস্তাবসমূহ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। 


খাদিমুল কুরআন পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত ২৭তম ৩দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মহাসম্মেলনে উপস্থিত সকলকে আন্তরিনক মোবারকবাদ জানান। বিশেষভাবে সিলেট জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীবৃন্দ ও সাংবাদিক বন্ধুগণসহ সর্বস্তরের জনগণকে আন্তরিক কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ইআ-০৭