ফাইল ছবি

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ দেশটির সেনাপ্রধান ছিলেন ৯ বছর (১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত); ওই বছরই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং তার দু’বছর পর ২০০১ সালে নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালের শুরু পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

 


অর্থাৎ টানা ৯ বছর একই সঙ্গে পাকিস্তানের সরকার, রাষ্ট্র ও সেনাপ্রধান ছিলেন পারভেজ মোশাররফ মোশাররফ। বিরল রোগ অ্যামিলোইডোসিসে ভুগে রোববার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক এই শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
 

১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্ম হয়েছিল পারভেজ মোশাররফের। দেশভাগের পর তার পরিবার দিল্লি থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচিতে এসে স্থায়ী হয়। করাচির সেইন্ট প্যাট্রিক’স স্কুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ শেষে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ওই বছরই কমিশন্ড কর্মকর্তা হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
 

কাশ্মির ইস্যুতে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ছিল তার প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা। সেনাবাহিনীর তরুণ জুনিয়র অফিসার হিসেবে ওই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পরের বছর ১৯৬৬ সালে পাক সেনাবাহিনীর এলিট স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি) তে যোগ দেন মোশাররফ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এসএসজির কোম্পানি কমান্ডারের পদে ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক দায়িত্ব পালনের সুবাদে ব্যাচের অন্যান্য কর্মকর্তাদের তুলনায় সেনাবাহিনীতে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন তিনি।
 

১৯৯৮ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দেশটির সেনাপ্রধান হিসেবে পারভেজ মোশাররফকে নিয়োগ দেন। পরের বছর তাকে সেনাপ্রধান করেন নওয়াজ। ওই বছরই রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই নওয়াজ শরিফ ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়েই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ। তারপর ২০০১ সালের জুন মাসে নিজেকে পাকিস্তানের ১০ম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।
 

প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সময় দু’টি বড় ঘটনা তার জন্য সংকট বয়ে এনেছিল। একটি হলো পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রেসিডেন্ট ও দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ড। ধারণা করা হয়, ২০০৭ সালে ঘটা সেই হত্যাকাণ্ডে মোশাররফের হাত ছিল এবং তার নির্দেশেই গুপ্তহত্যার শিকার হন বেনজির। আদালতে অবশ্য হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে এই ঘটনায় মোশাররফের ভাবমূর্তি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 

পরের ঘটনাটিও ঘটেছিল একই বছর। ২০০৭ সালের মার্চে ক্ষমতার অপব্যাবহারের অভিযোগ তুলে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মুহম্মদ চৌধরীকে পদচ্যুত করেছিলেন মোশাররফ। এ ঘটনায় আইনজীবী, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মীরা যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা সামাল দিতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছিল তাকে।
 

একই সঙ্গে সংবিধানও স্থগিত করেছিলেন তিনি; কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় জরুরি অবস্থা জারির ২৫ দিনের মাথায় তিনি সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন, তবে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকেন। ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জরুরি অবস্থা তুলে নেন।
 

২০০৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। তারপর অভিশংসন এড়াতে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। ২০১০ সালে পারভেজ মোশাররফ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার দলের নাম অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এপিএমএল)। তবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তার দল তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
 

উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৬ সালের মার্চে দেশ ছাড়েন পারভেজ মোশাররফ। তারপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১০


সূত্র : ঢাকাপোষ্ট