সংগৃহিত ছবি।

‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।’ বিখ্যাত এই প্রবাদের সেরা উদাহরণ এখন তৌহিদ হৃদয়। তার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স, সেই বিশ্বাসের সেরা প্রতিদান দিয়ে চলেছেন এই তরুণ, কাড়ছেন সবার হৃদয়।

বিপিএলে এবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের অনেকের চেয়ে কম ম্যাচ খেলেও হৃদয় এখন শীর্ষে। আসরে এখন পর্যন্ত বেশি হাফসেঞ্চুরি তার ব্যাটে। আছে দুটি আশি ছাড়ানো স্কোর। বাংলাদেশি হিসেবে স্ট্রাইকরেট ও গড় দুটোই অবিশ্বাস্য, যথাক্রমে ১৪৯.২০ ও ৫৩.২৮।


এ সবই তার ওপর রাখা বিশ্বাসের ফল। দলের সবার বিশ্বাস ও আস্থাই বদলে দিয়েছে যুব বিশ্বকাপ জয়ী হৃদয়কে।

অথচ গেল বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে ১১ ম্যাচে ফিফটিহীন ১৩৬ রানে একেবারে হতাশ করেছেন। আসরের শেষদিকে তাই একাদশে জায়গাও হারান। এরপর প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে ৯ ম্যাচে ২৫৯ রান। পরের বিপিএলে দল পাবেন কিনা সেই প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে হৃদয়ের সামনে। সংশয় দূর করে দল পেলেন। সিলেটের সামনে সুযোগ ছিল সাব্বির রহমানকে নেওয়ার। কিন্তু মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটারদের কোচিং প্যানেল আস্থা রাখে হৃদয়ের ওপর।

এই প্রতিদানটা দারুণভাবে দিতে পেরে খুব খুশি তৌহিদ হৃদয়। বলছিলেন, ‘অনেক দিন হলো রাজিন ভাই আমাকে নজরে রেখেছিলেন। ওনার সঙ্গে আমি গত এ দলেও ছিলাম। তো এতদিন যে আমাকে দেখছিলেন তিনি, আমার খেলার ওপর তার একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ যে উনি এই বিপিএলে আমার ওপর আস্থাটা রেখেছেন। আর আমি নিজের থেকে চেষ্টা করেছি এমন বড় মঞ্চে যখন সুযোগ পাব যেন ভালো করি। এবার সেই চেষ্টায় সফল হয়েছি।’

২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের ব্যাটিংয়ের ‘হৃদয়’ বলা হতো তাকে। মুশফিকুর রহিমের মতোই খেলেন ৪ নম্বর পজিশনে। মিডলঅর্ডারে নেমে যুবদলের হয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্বে সফল হয়েছেন অনেকবার। লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন বলে বড় ফরম্যাটে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান ধরা হয় হৃদয়কে।

তাই বিসিবির প্রতিটি প্রোগ্রামেই আছেন এই তরুণ। কিন্তু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পর ঘরোয়া ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না তার। বিশ্বকাপ জয়ের পর একদম হারিয়েই যাচ্ছিলেন। এই বিপিএল হৃদয়কে আবার ফেরাল লাইমলাইটে।

সিলেটের হয়ে সবশেষ ম্যাচে ওপেন করেছেন। এর আগে খেলেছেন তিনে। মিডল থেকে টপঅর্ডারের প্রতিটি পজিশনেই ভালো করার পেছনের কারণ, সাহস ও দলের সবার তার প্রতি বিশ্বাস। তার পজিশনটা মুশফিকুর রহিমের মতো চার নম্বরে। শুধু পজিশন নয়, এ দুজনের জেলাও এক- বগুড়া। নিজের আইডলকে ব্যাটিং অর্ডারে জায়গা দিতে একটু ওপরে খেলতে হচ্ছে হৃদয়কে। মুশফিকের মতো স্পিন ভালো খেলেন, কিন্তু টপঅর্ডারে খেলার জন্য পেস বোলিংয়ের বিপক্ষেও নিজেকে তৈরি করেছেন।

ব্যাটিং পজিশনের সময় দু’পায়ের গ্যাপটা আগের চেয়ে একটু বেশি রাখছেন। ব্যাটও অফস্টাম্পের ওপরে তুলে রাখছেন একটু উপরে। দু’পায়ের দূরত্ব এবং ব্যাট লিফট বেশি থাকলে শট নেওয়ার সময় শক্তি বেশি পাওয়া যায় এবং বল বেশি দূরেও পাঠানো যায়।

হৃদয় অবশ্য ব্যাটিং উন্নতির পেছনে কৃতিত্ব দিলেন দলের বিশ্বাসকে, ‘বিশেষ কাজ কিছু না (ব্যাটিং নিয়ে)। সাধারণ ব্যাটিং অনুশীলন করেছি। হ্যাঁ, কিছু কাজ করেছি কিন্তু সেসব অতটা উল্লেখযোগ্য নয়। আর মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি রেখেছি যেকোনো পজিশনে খেলার এবং ভালো করার। সবচেয়ে বড় কথা দল থেকে যে সমর্থন ও বিশ্বাস পাচ্ছি এটা আমাকে বেশি উজ্জীবিত করেছে। নির্ভার থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতেই ভালো করা যায়। সেটা হয়েছে আরকি।’

হৃদয় নির্ভার হয়ে খেলছেন তা মাশরাফীর কথায় স্পষ্ট। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে কুমিল্লার বিপক্ষে একটি ম্যাচে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। মাশরাফী ওই শটের পর বলেন, ‘ও ওই বলে আউট হলেও আমরা কিছু বলতাম না। হৃদয়কে আমরা ওর মতো ছেড়ে দিয়েছি। এভাবে পাশে থাকা প্রয়োজন। আমাদের দল থেকে, বিশেষ করে আমি যতক্ষণ আছি, ওই সুযোগটা দিয়েছি যে ও যেন যেভাবে চায়, সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারে।’

যুব বিশ্বকাপের পর হারিয়ে যাওয়া হৃদয় নিজেকে সত্যিকার অর্থেই মেলে ধরেছেন। শরিফুল ইসলাম, শামিম হোসেন, মাহমুদুল হাসানের পর ওই ব্যাটের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলের দরজায় সজোরে কড়া নাড়ছেন।

তবে সেসব স্বপ্ন হৃদয়ের চিন্তায় এখনই আসছে না, ‘জাতীয় দলের ব্যাপারে স্বপ্ন তো আমার দেখার কিছু না। ইচ্ছা আছে কিন্তু সেটা পরের চিন্তা। এখন যে টুর্নামেন্টে খেলছি এখানে যেভাবে খেলছি সেটা ধরে রাখতে চাই। আমার পারফরম ঠিক থাকলে আর আল্লাহ চাইলে অবশ্যই জাতীয় দল সম্ভব কিন্তু সেটা পরের বিষয়। আমি এই টুর্নামেন্ট নিয়েই থাকছি।’

বিপিএল নিয়ে থাকলেই জাতীয় দলের স্বপ্ন সত্যি হতে পারে হৃদয়ের। যে ধারাবাহিকতায় এগোচ্ছেন তাতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলে এক আসরে ৫০০ রান অসম্ভব না তার জন্য। এক আসরে সবচেয়ে বেশি ৪৭৬ রান আছে তামিম ইকবালের। ২০১৬তে ৬ ফিফটি করেছিলেন তিনি। তামিমকে ছুঁতে আর এক ফিফটি চাই হৃদয়ের। আর রানে টপকাতে চাই আরও দু-তিনটি ফিফটি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে