ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মাথায় চলছে সেলাই। সেলাইয়ের কাজ করছেন দুই ব্যক্তি। এমন একটি ভিডিও গেল কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ১২ ফেব্রুয়ারির দৃশ্য এটি।


যারা আহত ব্যক্তির মাথায় সেলাই দিচ্ছিলেন তারা কেউই চিকিৎসক কিংবা নার্স নয়। দু’জনই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজনের নাম এবাদুর রহমান, অপরজন সাইফুল ইসলাম। আর আহত ব্যক্তির নাম আবদুল করিম।
 

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এবাদুর রহমান প্রথমে আহত ব্যক্তির মাথার চুল কাটছেন। এর কিছুক্ষণ পর যোগ দেন সাইফুল। তিনি আহত আবদুল করিমের হাতে স্যালাইন পুশ করেন। এরপর দু’জন মিলে আবদুল করিমের মাথায় সেলাই দেন।
 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের নিজ করনসি গ্রামের আবদুল করিম প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। আহতাবস্থায় তার স্ত্রী ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের ১১নং ওয়ার্ডে। সেখানে চিকিৎসকের বদলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর ও সাইফুল মিলে তার মাথায় সেলাই দেন।
 

হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডটি পুরুষ সার্জারির। ওই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন এবাদুর রহমান। এরই সূত্র ধরে প্রায়ই তিনি রোগীদের কাটাছেঁড়ার সেলাই দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে এমনটি করে থাকেন।
 

অভিযোগ আছে, রোগীদেরকে অতিরিক্ত সুতো কিনে আনতে বাধ্য করেন এবাদুর। এরপর সেলাইয়ের পর অবশিষ্ট সুতো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে যায় বাইরের ফার্মেসিগুলোতে। এভাবে এবাদুর রহমান ও তাদের সিন্ডিকেট রোগীদের সর্বস্বান্ত করেন। এছাড়া চিকিৎসকের বদলে অদক্ষ হাত দিয়ে সেলাই দেওয়ায় অনেক সময় রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। আবার হাত পরিষ্কার না করে এবং গ্লাভস না লাগিয়ে ক্ষতস্থানে হাত দেওয়া এবং সেলাই দেওয়ায় অনেক সময় রোগীর ‘ইনফেকশন’ হয়।
 

আব্দুল করিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওই দিন তাঁর মাথায় আঘাতের কারণে তিনি ঘটনার বিস্তারিত বলতে পারছেন না। তিনি জানতেন না চিকিৎসকের বদলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেলাই দিয়েছেন। ওই দিন তাঁকে ১৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছিল। স্ত্রীর কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হয়েছিল, ঠিক বলতে পারছেন না আব্দুর করিম। তাঁর স্ত্রীও বর্তমানে অসুস্থ।
 

এ বিষয়ে কথা বলতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে কথা বলতেও অপারগতা জানান।

বিষয়টি নিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালের উন্নয়ন এবং মান বৃদ্ধির কাজ চলছে। সব জায়গায় এমন কিছু ব্যক্তি আছে যারা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিশেষ সুবিধা নিতে চায়। আমরা তাদের সনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। এসব ঘটনা হাসপাতালের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। একই সাথে রোগীদের হাসপাতাল বিমুখ করে। আমরা আমাদের সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
 

হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্স ছাড়া যাতে অন্য কেউ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাজ না করেন এ ব্যাপারে লিখিত ও মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। ভিডিও চিত্রে যাঁরা চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত/শাদিআচৌ/এসডি-২৯