সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির মো. মহিবুল্লাহকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
মহিবুল্লাহ জঙ্গি সংগঠনে ‘ভোলার শায়েখ (আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন)’ হিসেবে পরিচিত। জঙ্গি দলটিকে সক্রিয় রাখতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক পলাতক জঙ্গি নেতা শামীম মাহফুজ ও কারাবন্দি নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। অর্ধশত তরুণ ঘর ছাড়ার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে মুহিবুল্লার তথ্য পায় সিটিটিসি। এরপর নানাভাবে খুঁজেও তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারছিলেন না সিটিটিসি কর্মকর্তারা।
জঙ্গি নেতা মহিবুল্লাকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ পাহাড়ের প্রশিক্ষণক্যাম্পে দিনভর জিহাদের ট্রেনিং শেষে সন্ধ্যার পর বয়ান (বক্তব্য) করতেন, যাতে জঙ্গিবাদে যোগ দেওয়া প্রশিক্ষণার্থীরা অকাতরে জীবন বিসর্জন দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তার বয়ান শুনেই অর্ধশত তরুণ ঘর ছেড়ে পাহাড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল।’
গ্রেপ্তার মহিবুল্লাহকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর কথা জানিয়ে সিটিটিসি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
মহিবুল্লার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। এতে থাকা তথ্য ঘেঁটে জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করছেন সিটিটিসি কর্মকর্তারা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহিবুল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘মহিবুল্লাহ উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসারের নায়েবে আমির হিসেবে কথিত শুরা (সর্বোচ্চ) বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, যাকে সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতা বলা হয়- সেই শামীম মাহফুজের আস্থাভাজন। ফলে প্রশিক্ষণক্যাম্প পরিচালনাসহ সব বিষয়ে শামীম মাহফুজ তার ওপর ভরসা করতেন, নির্ভর করতেন।’
সিটিটিসি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মহিবুল্লাহ চট্টগ্রাম হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্র থাকাকালে আরেক জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) সঙ্গে যুক্ত হন। তৎকালীন হুজি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয় তার। একপর্যায়ে হুজিবির অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেন। সে সময় হুজির তৎকালীন নেতা মুফতি আব্দুর রউফ আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে হাটহাজারি মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিতেন। ওই বক্তব্য আত্মস্থ করে একপর্যায়ে বড় বক্তা হয়ে ওঠেন মহিবুল্লাহ। মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। একইসঙ্গে পরিচালনা করেন জঙ্গি কার্যক্রম।’
প্রশাসনের তৎপরতা, নজরদারি ও গ্রেপ্তারের কারণে একপর্যায়ে হুজিবির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়লে মুহিবুল্লাহ ও তৎকালীন হুজিবির একটি গ্রুপ শামীম মাহফুজের নেতৃত্বে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে জঙ্গি কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান। সেই লক্ষ্যে মহিবুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেন মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি নামে এক হুজি নেতা। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তার হওয়ার পর হুজির আরেক সদস্য রাকিবের সঙ্গে মহিবুল্লাহর যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে থাকেন।
পলাতক জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/ইআ-১২