সিলেট অঞ্চলে বিভিন্ন নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) কর্তৃক মৌলভীবাজারের আদমপুর বাজার মনিপুরী কালচারেল কমপ্লেক্সে আয়োজিত মনিপুরী ল্যাংগুয়েজ সেন্টারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, সকল নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা জরুরী।

তিনি আরও বলেন, এ দেশের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে উন্নয়নের মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠীসহ সবাইকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। তাই এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।


প্রধান অতিথি আয়োজক সংস্থা একডো কর্তৃক অত্র এলাকার সংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ মনিপুরী জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে কাজ করায় তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, শুধু মনিপুরী নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা নিয়েও কাজ করা অত্যন্ত জরুরী। এ বিষয়ে তিনি তার পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লেখক ও গবেষক আকমল হোসেন নিপু বলেন, সত্যিকার অর্থে সিলেট অঞ্চলের মনিপুরী জনগোষ্ঠী একটি সংস্কৃতির দিক দিয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী জনগোষ্ঠী। সঠিক পরিচর্যার অভাবে এই জনগোষ্ঠীর অনেক কিছুই এখন প্রায় বিলপ্তির পথে। এগুলোকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাওয়া উচিত। আর রাষ্ট্রীয়ভাবেও এর সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা জরুরী। তাই তিনি মনিপুরী জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একডো’র নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী লক্ষ্মীকান্ত সিংহ বলেন, দেশে আজ প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন নানান সমস্যায় জর্জরিত। এ জনগোষ্ঠীর অনেক যুবক যুবতী আজ বেকার সমস্যা নিয়ে দিনযাপন করছে। তিনি আরও বলেন, একডো এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ শতাধিক মনিপুরী শিক্ষার্থীকে মনিপুরী লিপি ও এর সাহায্যে মনিপুরী ভাষা লিখতে ও পড়তে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে তিনি তাদের এই কার্যক্রমের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য সরকারিভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মনিপুরী শিশুদের মনিপুরী ভাষায় পাঠদান নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।

একডো’র সভাপতি ইন্দ্রজিত সিংহের সভাপতিত্বে এবং নোংপকলৈ সিনহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতেই মনিপুরী ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন মনিপুরী ল্যাংগুয়েজ সেন্টারের শিক্ষার্থীরা। এরপর মনিপুরী ল্যাংগুয়েজ সেন্টার এর কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন একডো’র প্রকল্প সমন্বয়কারী তাসনিম চৌধুরী। সভায় উপস্থিত অভিভাবক ও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ওইনাম পামহৈবা সিংহ নির্মল, শিক্ষিকা বৃন্দারানী দেবী, কন্থৌজম শিল্পী প্রমূখ। সবশেষে অতিথিগণ প্রায় ষাট জন মনিপুরী শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন মনিপুরী বই ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/আরআই-কে