উন্নয়নে শিক্ষার মান নবীন-প্রবীন ঐকতান এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অভিভাবক, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে ৮০ বছর উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (১১ মার্চ ) দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ৮০বছর উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে সকাল ১০ টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা ও বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। এসময় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কার্যক্রম শুরু করেন অতিথিরা।
পরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অভিভাবক, প্রাক্তণ ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে ৮০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি এলিমের সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইভানের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও জালালাবাদ লিভার ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পূন:মিলনী মানেই এক উচ্ছাস ও আনন্দের নাম। আর এই বিদ্যালয়ের ৮০ বছর উদযাপনে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। তাদের আনন্দ উৎসবের বন্যা ফিরিয়ে নিচ্ছে আমাদের শৈশবে। এরকম অনুষ্ঠান স্বরণ করিয়ে দেয় আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। তিনি বলেন আমাদের পুর্বসুরীরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের সেই ত্যাগ স্মরণ রেখে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে হবে, যুগ যুগ ধরে তাদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যারা প্রতিষ্ঠানকে এতদূর নিয়ে এসেছেন তাদের এই অক্লান্ত শ্রম বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। এতেই এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠান, এগিয়ে যাবে দেশ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিশিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানী এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমদ বলেন, ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখছে এই বিদ্যালয়। নতুন প্রজন্মদের উচিত ইতিহাসকে স্বাক্ষী রেখে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা। শিক্ষা, ধার্মিকথা, মানসিকতা, মেধা ও মননশীলতার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যেকটি ঐতিহ্য রক্ষনাবেক্ষণ করতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, বাঙালী জাতীয়তাবাদ রক্ষায় সন্তানদেরকে দেশপ্রেম ও সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট করে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। দেশ ও সমাজের সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম বলেন, শুধু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নয় ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। এতেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বাচ্চাদের যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে তাদের প্রসার করতে হবে। এসময় তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।
অনুষ্টানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান খান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী মান্নান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী মজুমদার, প্রাক্তন ছাত্র ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হানিফ খান।
শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুস সামাদ। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সরকারি এমসি একাডেমির সাবেক অধ্যক্ষ মনসুর আহমদ চৌধুরী, প্রাক্তন ছাত্র দেলোয়ার হোসেন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাসী এনামুল হক খান নেপা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এড. দেলোয়ার হোসেন দিলু, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শুয়েব, প্রাক্তন ছাত্র সুজন আহমদ খান, তুহিন জোয়ারদার, হেতিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসির সভাপতি জাফরান জামিল, শিক্ষক রিবলু মিয়া, প্রভাষক এমদাদ আহমদ প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত আঞ্জুম নাবিলা, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাহফুজা হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ইমাদ আহমদ, গীতা পাঠ করেন ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্রী পূজা চক্রবর্তী।
পরে বিদ্যালয়ের ১৯৯৭ সালের এসএসসি ব্যাচের উদ্যোগে নির্মিত শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন অতিখিবৃন্দ। এছাড়াও অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত