মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমীত আসুক চত্বরে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পাথারিয়া বনে আগুন দেয়া দুস্কৃতিকারীদের শাস্তির দাবীতে পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম নামক সংগঠন মানববন্ধন আহবান করে সোমবার সকাল থেকে ফেসবুকে প্রচালনা চালাতে থাকে। কিন্তু সোমবার রাত প্রায় ৯টা থেকে হঠাৎ করে উক্ত স্থানে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করে হয়। একে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে। মঙ্গলবার সকালে আসুক চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে সরকার দলের কর্মসূচী ঘোষণায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম তাদের পূর্ব ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করে।
পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম সূত্রে জানা যায়, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ ভাগ ইউনিয়নের সমনভাগ বন বিটের আওতাধীন পাথারিয়া সংরক্ষিত বনে গত ৭মার্চ দুস্কৃতিকারীরা অসৎ উদ্দেশ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে প্রায় ৪০ হেক্টর জায়গার গাছ-বাঁশসহ বনজ সম্পদ জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সেই সাথে অসংখ্য বন্যপ্রাণী মারা যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম নামক একটি সংগঠন মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমীত আসুক চত্বরে মানববন্ধন আহবান করে সোমবার সকাল থেকে ফেসবুকে প্রচারণা চালাতে থাকে। কিন্তু উক্ত মানববন্ধন বন্ধ করতে জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আয়োজকদের বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এমনকি জুড়ী থানার ওসিও সে চেষ্টা করলে আয়োজকরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এক পর্যায়ে সোমবার রাত প্রায় ৯টা থেকে হঠাৎ করে উক্ত স্থানে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন দলীয় কয়েক নেতাকর্মী। একে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে।
অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার সকালে আসুক চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হঠাৎ করে সরকার দলের কর্মসূচী ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম তাদের পূর্ব ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করে। তবে আওয়ামী লীগ দলীয়কর্মীরা সমাবেশ করে ও মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুক মিয়া’র সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকির আহমদ কালা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম, জায়ফরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির দারা, ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক তাজুল ইসলাম, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশীদ সাজু, সহ-সভাপতি সায়রুল আলম, হাসান তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা, সাংগঠনিক শাহ আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ভূঁইয়া, জুড়ী তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আদনান আশফাক প্রমুখ।
পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সম্পাদক খোরশেদ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবছে কেন? পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন এমপি মহোদয়ের মন্ত্রণালয়ের অধীন ও উনার নির্বাচনী এলাকার সংরক্ষিত বন ও বন্যপ্রাণী দুস্কৃতিকারীরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সেখানে গিয়ে সরেজমিনে দেখার পর বন বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানোর পর ও তারা টালবাহানা শুরু করেন। প্রাকৃতিক বনকে প্রকৃতির হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা নিয়ে বাণিজ্য না করার জন্য এবং দোষীদের শাস্তির দাবীতে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলাম।
পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সভাপতি কামরুল হাসান নোমান বলেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বন, পাহাড়, টিলা রক্ষার্থে বার বার জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন, আমরা সেটার পক্ষেই কাজ করছি এবং মানববন্ধন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দেওয়ার কারনে তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা মানববন্ধন করিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুক মিয়া বলেন, আমি দলের শান্তি সমাবেশ শোনে সেখানে গিয়েছি, আর কোন বিষয় আমার জানা নেই।
অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কথা অস্বীকার করে জুড়ী থানার ওসি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশ নিয়মিত টহল পরিচালনা করে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/মঞ্জুরে / নাজাত