সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ভোটার ও বাসিন্দারা। এসময় কিছুক্ষণ জেলা প্রশাসকের গাড়ি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানাপুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে।
রবিবার (১৯ মার্চ) বেলা ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে টুকেরবাজার একটি। এ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী ছিলেন সিরাজ মিয়া। তিনি ফুটবল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ১ ভোটের ব্যবধানে তিনি টিউবয়েল প্রতীকের প্রার্থীর কাছে হেরে যান।
অপরদিকে, সেলিনা বেগম নামের আরেক সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীও পরাজিত হন। প্রতারণার মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে বলে টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের একাংশ বাসিন্দা ও ভোটারের অভিযোগ। তারা এ বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করতে রবিবার বেলা ২টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসেন। তবে তাদের অভিযোগ- স্মারকলিপিটি প্রথমে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান গ্রহণ করতে চাননি। এসময় জেলা প্রশাসক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে তারা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এছাড়াও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মাহমুদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে জেলা প্রশাসকের গাড়ি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পরে এই দুই পরাজিত প্রার্থীকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এসময় স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার আশ্বাস প্রদান করেন তারা।
স্মারকলিপিতে মেম্বার প্রার্থী সিরাজ মিয়া ও সেলিনা বেগমের সমর্থকরা উল্লেখ করেন- টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসায় শুরু থেকেই অনিয়ম দেখা যায়। ভোটগ্রহণ সকাল ৮টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সকাল ৯টায় শুরু করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার আম্বরখানা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মো. রেজাউর রহমান যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করতে দেরি করেন। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল শিটে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য পোলিং এজেন্টদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এজেন্টরা এভাবে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১ ঘন্টা আগেই প্রিজাইডিং অফিসার ফুটবল মার্কার সকল পোলিং এজেন্টকে জোরপূর্বক বের করে দেন।
নানা অনিয়মের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং অফিসার মৌখিকভাবে প্রথমে ফুটবল মার্কার প্রার্থীকে ৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দিলেও তার স্বাক্ষরিত ফলাফল শিটে দেখা যায়- টিউওবয়েল মার্কার প্রার্থী ১ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এটি প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রতারণামূলক এই ফলাফল শিটে অনেক প্রার্থীর এজেন্টরা স্বাক্ষর করেননি। এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ফলাফল ঘোষণা করেছেন।
স্মারকলিপিতে সেই ফলাফল বাতিল করে টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
হট্টগোল ও উত্তেজনার বিষয়ে এসএমপি’র উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সিলেটভিউ-কে বলেন- জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে হট্টগোলের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি এবং পরিস্থিতি শান্ত করি। পরে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের গাড়ি এ স্থান ত্যাগ করে। এরপর ওই দুই প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক হয়। এতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগকারীদের স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নুরুল / ডালিম