‘পানির অপর নাম জীবন’। জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এখন সে কথা বদলে গেছে। এখন বলতে হয় ‘বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের পানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত পরবর্তি বিশ্বযুদ্ধ হবে পানি নিয়ে। দিনে দিনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট পর্যায়ক্রমে বেড়েই চলছে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় একদিকে খাবার পানি সংকট অর্থাৎ পানিশূন্য নলকুপের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে এ উপজেলায় কয়েক হাজার গভীর/অগভীর নলকুপে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) ভাবে পানি পড়ে প্রচুর পানি অপচয় হচ্ছে।


সরেজমিন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট ও অপচয়ের এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ফুলতলা ইউনিয়নের মতিনপুর, বরুয়াকান্দি, চুঙ্গাবাড়ী, রাজকী, বটুলি, সাগরনাল ইউনিয়নের বরইতলী, উত্তর বড়ডহর, দক্ষিণ বড়ডহর, উত্তর আলীপুর, পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের ছোট ধামাই, সোনারুপা, জামকান্দি, দূর্গাপুর, কালাছড়া, গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কুচাই, জালাই, কুচাই চা বাগান, পাথরটিলা, ডুমাবাড়ী, লাঠিটিলা, মন্ত্রীগাঁও, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের ধামাই, শিলঘাট এবং সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের জায়ফরনগর, শাহাপুর, নিশ্চিন্তপুর, ভূয়াই, হাসনাবাদ, বাহাদুরপুর, কানকৈরচক, প্রহল­াদপুর, পশ্চিম জায়ফরনগর, ভোগতেরা ও চম্পকলতা গ্রামের আশি ভাগ এলাকায় সাধারণ নলকুপে পানি উঠেনা। 



এ সব এলাকার অসংখ্য নলকুপ অকেজো পড়ে আছে। বিশেষ করে মতিনপুর, বরুয়াকান্দি, চুঙ্গাবাড়ী, রাজকী ও পাহাড়ী এলাকার পানি সংকট কারবালাকেও হার মানায়। উলে­খিত গ্রামের অধিকাংশ স্থানে খাবার বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, “নিজস্ব উদ্যোগে স্থাপিত সাধারণ নলকুপে পানি পাওয়া যায় না। অনেক জায়গায় ৩০/৪০ ফুট নিচে যাবার পর মাটির প্রচন্ড চাপের ফলে পাইপ বসানো কিংবা তুলে আনা যায় না। যে কারনে কোন নলকুপ মিস্ত্রী এ এলাকায় কাজে যেতে চায় না। যার ফলে খাবার পানির জন্য ছড়া, কুয়া, নদী-নালা, পুকুর ও খালের ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়। ভেসে থাকা মরা জীবজন্তু সরিয়ে সংগ্রহ করা পানিই পান করা, রান্না, গোসলসহ যাবতীয় কাজে ব্যবহার হচ্ছে।


এতে করে পানিবাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ বিস্তার লাভ করছে। গভীর নলকুপ বসানের সামর্থ্য কারো নেই। সরকারী বরাদ্ধের গভীর নলকুপ গরিবের ভাগ্যে জুটেনা। বড় লোক ও বড় নেতারা তা পেয়ে থাকেন”। অপরদিকে ফুলতলা ইউনিয়নের ফুলতলাবাজার, দক্ষিণ সাগরনাল, এলবিনটিলা, সাগরনাল ইউনিয়নের উত্তর সাগরনাল, নালারপার, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ বাজার, বাছিরপুর এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের কামিনীগঞ্জ বাজার, ভবানীপুর, বিশ্বনাথপুর, মনতৈল, বেলাগাঁও ও জাঙ্গিরাই গ্রামের অধিকাংশ স্থানে হাজারো গভীর ও অগভীর নলকুপে স্বয়ংক্রিয় ভাবে পানি পড়ে। সামান্য একটি ট্যাপ লাগিয়ে পানি অপচয় রোধ করা সম্ভব হলেও অবহেলায় কেহ তা করছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই খাবার বিশুদ্ধ পানি সংকট জঠিল আকার ধারণ করবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। 


এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাপকল গুলোর বেশির ভাগেই পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। দেশে খাবার বিশুদ্ধ পানি নিয়ে সরকার, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও তা শুধুমাত্র কাগজে সীমাবদ্ধ। সাধারণ মানুষ এর কোন সুফল পাচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগীরা জানান। 


সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যেভাবে গভীর নলকুপ স্থাপন হচ্ছে এবং পানির অপচয় হচ্ছে তাতে করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এতে করে অচিরেই খাবার বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/লাল/ইআ-১২