গোল উৎসবে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ভুটানকে উড়িয়ে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে নিয়েছিলেন মেয়েরা। তবে ৮-১ গোলের দুর্বার জয়ের আনন্দ মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। পরের ম্যাচেই ছন্দপতন। দুরন্ত ফর্মের ট্র্যাক থেকে ছিটকে গেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। হার মেনেছেন রাশিয়ার কাছে। 


শক্তিমত্তায় পিছিয়ে ছিলেন রুমা আক্তাররা। মাঠের লড়াইয়ে মিলল তার প্রমাণও। প্রতিপক্ষ রাশিয়ার জালে বলই জড়াতে পারেননি তারা। উল্টো স্বাগতিকরা আত্মসমর্পণ করেছেন ৩-০ গোলে। এই ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের যেন শেষ ছিল না। প্রথমবারের মতো ইউরোপের দলের বিপক্ষে খেলা বলে রোমাঞ্চে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন ফুটবলাররা। যে কারণে রুশ কন্যাদের রুখতেই পারেননি তারা।


 

রাশিয়া পরীক্ষায় ফেল করলেও এবার নতুন মিশনে নামতে হচ্ছে মেয়েদের। আগের ম্যাচের তিক্ততা ভুলে এবার জয়ের ধারায় ফেরার জন্য মাঠে নামছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। আজকের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারত। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে প্রতিবেশীদের মুখোমুখি হবেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

রাশিয়া ম্যাচে স্নায়ুচাপ পেয়ে বসেছিল স্বাগতিকদের। যে কারণে রুশ কন্যাদের মার্কিংয়ে রাখার প্ল্যান কাজে লাগাতে পারেননি স্বাগতিকরা। ম্যাচ শেষে কথাটা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন কোচ ছোটন, ‘আগেই বলেছি, আমরা এই প্রথম ইউরোপিয়ান একটা দলের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি, মেয়েরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। ওরা অভিজ্ঞতায়, শারীরিকভাবে এগিয়ে, টেকনিক্যালিও ভালো। আমি মনে করি, এগুলোই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’

চাপের কারণে নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে পারেননি মেয়েরা। শুরুটাও ছিল যাচ্ছেতাই। তাই তো মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠে ছন্দে ফিরতে না পারার আক্ষেপের সুর ঝরল ফুটবলগুরু গোলাম রব্বানী ছোটনের কণ্ঠে, ‘তবে আমাদের শুরুটা হয়েছিল বাজে। আস্তে আস্তে মেয়েরা খেলায় ফিরেছে, যত সময় গেছে মেয়েরা ভালো খেলেছে। চাপের কারণে মেয়েদের শুরুটা এ রকম হয়েছিল, বিরতির সময় তাদেরকে আমরা বিষয়টি বলেছিলাম, এরপর তারা ভালো করেছে। আমি মনে করি, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এ ম্যাচটি বিরাট সহায়ক হবে সামনের এএফসি ও সাফের ম্যাচগুলোর জন্য।’

ভুটানকে হারিয়ে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন দেশের মেয়েরা। মাঝে পথ হারালেও আজ ফের ট্র্যাকে ফিরতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। যে করেই হোক ভারতীয় কন্যাদের হারাতে চান তারা। আগের ম্যাচের চাপ ঝেরে ফেলে চেনা রূপে ফেরার পরিকল্পনাই হাতে নিয়েছেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। দেশের মেয়েরা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে অভ্যস্ত। চেনা ‘শত্রু’ ভারতকে পেয়ে তাই জয় ছিনিয়ে নেওয়ার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রথম অর্ধেই সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন সুরভি আকন্দ প্রীতি। কিন্তু ক্ষিপ্রগতির শট ফাঁকি দিতে পারেনি রাশিয়ান গোলরক্ষকের চোখ। রাশিয়া ম্যাচে সুখস্মৃতি বলতে এতটুকুই। দৃশ্যটা বাদ দিলে বাংলাদেশ অতিথিদের ওপর আসলে আধিপত্য বিস্তারই করতে পারেনি। এলেনা-আনাস্তাসিয়ারা যে মানের প্রশিক্ষণ পান সেটা দেশের প্রীতি-সাগরিকারা কল্পনাও করতে পারেন না। উন্নত প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে লড়াই হতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ নিয়ে ছোটন বলেন, ‘৩৮তম মিনিটে ভালো একটা সুযোগ তৈরি হয়, প্রীতির শট দারুণ সেভ হয়। শুরুতে ওদেরকে মার্কিংয়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রথম গোলটার পাসটা ৪০ গজ দূর থেকে এসেছে, এখানে আমাদের তিনজন মিডফিল্ডার ভুলটা করেছেন, তারা মার্কিংয়ে রাখলে এটা হতো না।’

বাংলাদেশের মেয়েদের সঙ্গে রুশ কন্যাদের পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিলেন ছোটন, ‘রাশিয়ার মেয়েরা যে লেভেলে ক্লাবে খেলেছে, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বুঝেছে, সেখানে আমাদের এই মেয়েরা এক বছর ধরে শিখছে। যদি এরাও পাঁচ-ছয় বছর শিখত, ওই পর্যায়ের ট্রেনিং করত। এখানে পার্থক্য অনেক। তা না হলে রাশিয়ার বিপক্ষে ভালো লড়াই করতে পারত।’

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত


সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ