সিলেট মহানগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকানে প্রথাগত ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি বাহারি ও মুখরোচক নানা খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। তবে এসব আয়োজনকে ছাপিয়ে সিলেটবাসীর ইফতারে এখনও প্রশান্তির আরেক নাম পাতলা খিচুড়ি। স্থানীয়ভাবে এটা ল্যাটা খিচুড়ি নামেও পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী এ খাবার ছাড়া যেন ইফতারের পরিপূর্ণতা এসে না সিলেটের মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে দিনভর পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতারে পাতলা খিচুড়ি বেশ স্বাস্থ্যসম্মত।
 

তবে কবে বা কোথা থেকে ইফতারে এই খিচুড়ি খাওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
 


রমজানে হোটেল-রেস্তোরাঁরা পাশাপাশি ঘরোয়া আয়োজনেরও অধিকাংশ বাড়িতে তৈরি হয় পাতলা খিচুড়ি। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন আর সামান্য তেল বা ঘি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি আরও মুখরোচক হয়ে ওঠে একটু শাক মেশালে। শরবত, খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙার পর পাতলা খিচুড়ি দিনের সবটুকু ক্লান্তি দূর করে দেয়।
 

সুবিদবাজর এলাকার বাসিন্দা মুরব্বি সাবেরিন মিয়া জানালেন, দিনভর রোজার পর পাতলা খিচুড়ি যেন ইফতারে স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইফতারিতে পাতলা খিচুড়ি খেয়ে আসছি। আমার মা-বাবাকেও দেখেছি সবসময় ইফতারে পাতলা খিচুড়ির আয়োজন করতে। খিচুড়ি নরম হওয়ায় হজমেও সমস্যা হয় না।
 

মহানগরীর শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী আয়শা বেগম জানান, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাতলা খিচুড়ি। ঐতিহ্যগতভাবেই পরিবারে এই খাবার খাওয়া হচ্ছে। সন্তানরা প্রথমে এ খাবার তেমন পছন্দ করত না। ভাজাপোড়া খাবার নিয়েই ছিল তাদের সব আগ্রহ। কিন্তু এসব খাবার খেয়ে রোজায় ওরা প্রায়েই পেটের নানা রোগে আক্রান্ত হতো। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইফতারে খিচুড়ি খাওয়া শুরু করি।
 

সিলেট পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রফেসর ডাঃ এম. এ. মালিক জানান, সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ইফতারিতে আমরা যে বাহারি আইটেমগুলো দেখতে পাই, সেগুলোর অধিকাংশই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিশেষ করে ভাজাপোড়া। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইফতারে নরম খাবারের প্রয়োজন। আর নরম খাবার বলতে নরম খিচুড়ি খাওয়া অনেক উপকারী। সাধারণ খিচুড়িতে শুধু ভাতের পুষ্টিপান রোজাদাররা। তবে পাতলা খিচুড়িতে ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ঘি সহ বিভিন্ন উপকরণ থাকে। এগুলো শরীরের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা মিটায়।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত/এসডি-২৬