পরিবেশমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে বিতর্কিত দুবাইপ্রবাসী সুলতান আহমদ হিরনের একটি ছবি ফেসবুকে ঘুরছে। ছবিতে সুলতানের ভাই যুবলীগ নেতা ফারুক মিয়ার পাশাপাশি বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনও রয়েছেন। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছরের আগস্টে স্বর্ণ উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য দুবাইপ্রবাসী সুলতানকে মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। তখনই ওই ছবিটি তোলা হয়েছিল।
এদিকে বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, সুলতান আহমদ হিরন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপিকে ‘ব্যবহার’ করে ‘প্রভাব খাটিয়ে’ সাটুরিয়া থানায় এক যুবককে মারধর করে স্বর্ণের টাকা উদ্ধার করেছেন। এমনকি সৎ ও সজ্জন হিসেবে পরিচিত পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনকে ‘বিতর্কিত’ করতে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র করছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি থানায় পুলিশের সামনে ‘স্বর্ণপাচারকারী’ দুবাইপ্রবাসী সুলতান আহমদ হিরনের মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি গত বছরের আগস্ট মাসে সাটুরিয়া থানায় ঘটেছে। এ ঘটনার খবর গত ২৪ মার্চ একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে, সুলতানকে ‘স্বর্ণপাচারকারী চক্রের নেতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সুলতান আহমদ হিরন বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগর গ্রামের মৃত আমিন আলীর ছেলে। সুলতান স্বর্ণ পাচার মামলায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সম্প্রতি তিনি জামিনে বেরিয়েছেন। তবে স্বজনদের দাবি, সুলতান ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে যুবককে থানায় মারধর করা হয়েছে তার নাম নাজমুল ইসলাম। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুয়ারিয়া থানায়। নাজমুল গত বছরের আগস্টে দুবাই থেকে দেশে আসেন। ওই সময় সুলতান কয়েক ভরি স্বর্ণ নাজমুলের কাছে দেন। বিনিময়ে নাজমুলকে বিমানের টিকিট দিয়েছিলেন সুলতান। কথা ছিলো নাজমুল স্বর্ণগুলো সুলতানের আত্মীয়ের কাছে দেবেন। কিন্তু নামজুল দেশে এসে স্বর্ণগুলো সুলতানের আত্মীয়ের কাছে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। স্বর্ণ উদ্ধারের জন্য সুলতান কয়েকদিন পর দুবাই থেকে দেশে ফিরে মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের দারস্থ হন। মন্ত্রী স্বর্ণগুলো বৈধ জেনে আইনীভাবে উদ্ধারের জন্য সাটুরিয়া থানার পুলিশকে বলেন। কয়েকদিন পর পুলিশ নাজমুলের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে থানায় আনে। ওইদিন সুলতান সাটুরিয়া থানায় গিয়ে নাজমুলকে পুলিশের সামনে মারধর করেন। পরে পুলিশ স্বর্ণ উদ্ধার করতে না পারলেও নাজমুলের কাছ থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে সুলতানের কাছে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করেছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সুলতান দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে জড়িত। তিনি প্রায় দুবাই থেকে দেশে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বর্ণ পাঠান। বিনিময়ে তাদের বিমানের টিকিট দেন কিংবা টাকা দেন।
সুলতানের বড়ভাই যুবলীগ নেতা ফারুক মিয়া জানিয়েছেন, বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন তাদের মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সুলতান তার স্ত্রী ও আমার এক বোনের মেয়ের জন্য সাটুরিয়ার এক যুবকের সঙ্গে বিদেশে থেকে স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। কথা ছিল, ওই যুবক দেশে স্বর্ণগুলো আমাদের কাছে দেবেন। কিন্তু তিনি দেননি। সোনা তার কাছে রেখে দেন। তারও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুদিন পরে সুলতান দেশে এসে আমাদের এলাকার মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের কাছে গিয়ে সোনা উদ্ধারে সহযোগিতা চান। উপজেলা যুবলীগের সম্পাদক কামাল আমাদের মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমিও ছিলাম। পরে মন্ত্রী স্বর্ণগুলো বৈধ জেনে ফোনে সাটুরিয়া থানা পুলিশকে আমাদের আইনী সহযোগিতা করতে বলেন। পুলিশ স্বর্ণগুলো উদ্ধার করতে না পারলেও ওই যুবকের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করেছে। তার দাবি, তার ভাই সুলতান স্বর্ণপাচারকারী নয়। তাকে পরিকল্পিতভাবে স্বর্ণপাচারকারী বানানো হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সহজ-সরল, বিনয়ী মানুষ হিসেবে সবাই চেনেন। যে কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। ছবি তুলতে পারেন। যে কারও বিপদ-আপদে তিনি পাশে দাঁড়ান। সহযোগিতা করেন। এখন কেউ যদি মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে কিংবা মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কোনো অপরাধ করে তবে তার জন্য মন্ত্রী দায়ী নন। তারা বলেন, মন্ত্রীকে বিতর্কিত করতে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র করছে। সুলতানের সঙ্গে মন্ত্রীর যে ছবি ভাইরাল হয়েছে সেটা গতবছরের তোলা। আর সুলতান এলাকার ছেলে হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে হয়ত ছবি তুলেছেন। এখন সুলতান কোনো অপরধারে সঙ্গে যুক্ত হলে তার দায় তো মন্ত্রীর নয়। এটা ষড়যন্ত্রের একটা অংশ বলে আমরা মনে করি।
সুলতানকে পরিবেশমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, গত বছরের আমি একটি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম। তখন সুলতান ও তার ভাই ফারুকের সাথে আমার দেখা হয়। এসময় সুলতান জানিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে তিনি এক যুবকের সাথে স্বর্ণ দেশে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ওই যুবক স্বর্ণগুলো তার স্বজনদের কাছে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। তখন তারা স্বর্ণ উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য আমাদের এলাকার এমপি পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের কাছে জন্য যেতে চান। ঘটনা শুনে আমিও তাদের সাথে গিয়েছিলাম। মন্ত্রী ঘটনা শুনে স্বর্ণের বৈধ কাগজপত্র দেখে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য বলেছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে একটি অশুভ চক্র ষড়যন্ত্র করছে। একইসাথে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও আমার চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সুন্দরের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সুলতান আমার এলাকার ছেলে। সে তাঁর স্বর্ণ হারিয়েছে বলে আমার কাছে এসে বলেছিল। সোনাগুলো বৈধ এবং শুল্ক পরিশোধ করে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছিল। স্বর্ণগুলো বৈধ দেখে তখন আমি পুলিশকে আইনীভাবে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম। পুলিশকে বলিনি তাঁকে ওসি বানিয়ে চেয়ারে বসাতে। মন্ত্রী আরও বলেন, সুলতানের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে তা তিনি জানতেন না।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম