এক দশক আগে পর্যন্ত ধারণা করা হতো, চাঁদ সম্পূর্ণ পানিশূন্য। সামান্য পানিও সেখানে নেই। পরে একাধিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন, পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহেও পানির অস্তিত্ব রয়েছে।
আর এবার বিজ্ঞানীরা চাঁদজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাঁচের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁতির ভেতরে পানি আবিষ্কার করেছেন। নেচার জিও সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত নতুন এই গবেষণায় বলা হয়েছে, চাঁদের পৃষ্ঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র কাঁচের পুঁতিতে কয়েক বিলিয়ন টন পানি রয়েছে, যা ভবিষ্যতের চন্দ্র মিশনে মহাকাশচারীদের দ্বারা নিষ্কাশন এবং ব্যবহার করা যেতে পারে।
নতুন এই আবিষ্কারটি মহাকাশ সংস্থাগুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিগুলোর মধ্যে একটি বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এর অর্থ হলো, চাঁদের এই উপাদানগুলো শুধু পানিই নয়, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনেরও একটি ব্যবহারযোগ্য উৎস হতে পারে।
নতুন গবেষণার সহ-লেখক যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্ল্যানেটারি সায়েন্স অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশনের অধ্যাপক মহেশ আনন্দ বলেন, ‘এটি আমাদের করা সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি। এই আবিষ্কারের ফলে কার্যকরী উপায়ে চাঁদে অন্বেষণের সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি।’
অধ্যাপক আনন্দ এবং চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চীনা চ্যাং-ই-৫ মিশনের মাধ্যমে পৃথিবীতে নিয়ে আসা চাঁদের মাটির নমুনা থেকে সূক্ষ্ম কাঁচের কণাগুলো বিশ্লেষণ করে তাতে পানির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। চাঁদের এই উপাদানের ওপর পরীক্ষা প্রকাশ করেছে যে, একসঙ্গে এগুলো যথেষ্ট পরিমাণে পানি ধারণ করে, যার পরিমাণ পুরো চাঁদের পৃষ্ঠ জুড়ে ৩০০ মিলিয়ন থেকে ২৭০ বিলিয়ন টন।
অধ্যাপক আনন্দ বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণা একটি নতুন পথ খুলেছে দিয়েছে। আপনি যদি এই উপাদানগুলো থেকে পানি বের করতে পারেন এবং এটিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঘনীভূত করতে পারেন, তাহলে এই পানি আপনি কিভাবে ব্যবহার করবেন, তা আপনার উপর নির্ভর করবে। চাঁদের অন্ধকার অংশে লুকিয়ে থাকা হিমায়িত পানির পরিবর্তে, চাঁদে কাজ করা মানুষ বা রোবটদের মাধ্যমে এই পানি নিষ্কাশন করাটা সহজ হবে বলে মনে করছি। কিন্তু বিষয়টি এমন নয় যে, আপনি উপাদানটি ঝাঁকাতে পারবেন এবং পানি বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। তবে প্রমাণ রয়েছে যে যখন এই উপাদানটির তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে চলে যায়, তখন এটি গলতে শুরু করবে।’
চাঁদের এই উপাদানের পরীক্ষায় আরো দেখা গেছে যে, কয়েক বছরের সময়সীমার মধ্যে কাঁচের কণাগুলোর ভিতরে এবং বাইরে পানি ছড়িয়ে পড়ে, যা চাঁদে একটি সক্রিয় জলচক্র নিশ্চিত করে।
গবেষণাপত্রের সহ-লেখক চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধ্যাপক সেন হুর মতে, ‘আগের ধারণার তুলনায় চাঁদ অনেক বেশি পানিসমৃদ্ধ।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত